মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি:: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলীতে এক গৃহবধুকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালেভর্তি করা হয়েছে। তিনি চার সন্তানের জননী। তার স্বামী সিএনজি-চালিত অটোরিকশার ড্রাইভার । অভিযুক্ত বাদশা মিয়া(২৬) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।
চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিনের নেতৃত্বে এই পাশবিক কাজ করা হয়েছে বলে জানান ওই নারী। চিকিৎসাধীন ৩৫ বছরের ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন,তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো, কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছি।
ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্যমতে, রাত ১২ টার দিকে বাড়ীতে এসে তার স্বামীর নাম ধরে ডেকে বলেন সিরাজ ভাই আমরা পুলিশ দরজা খুলেন । এরপর দরজা খুললে ৮ থেকে ১০ জন লোক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে তার বাড়িতে প্রবেশ করেন। তারপর তারা তার সিএনজি-চালিত অটোরিকশার ড্রাইভার স্বামী ও চার সন্তানকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।
এরপর তারা আমাকে বাইরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে ঘটনার বর্ণনা করেন ওই নারী।
তিনি আরও বলেছেন যে, এ বিষয়ে মুখ খুললে তার স্বামী ও সন্তানদের মেরে ফেলা হবে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ধর্ষণকারীরা।
ধর্ষিতার স্বামী জানান, আনুমানিক রাত চারটার দিকে তার স্ত্রীকে মারাত্মক আহত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ধর্ষণকারীরা।
তিনি আরো জানান, তার স্ত্রী গত রবিবার সকাল ১১টায় চর জুবিলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। সেখানে তিনি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে যেতে চান। ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমিন তাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেন। কিন্তু, তাকে (রুহুল আমীন) যখন বলা হয় যে ধানের শীষে ভোট দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, এরমধ্যেই তার স্ত্রী ব্যালটটি বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। এতেই রুহুল ক্ষেপে যান এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
এরপর, ওই নারীর স্বামী ও সন্তানের কান্নাকাটি শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, “প্রথমে গ্রামের একজন পল্লী চিকিৎসককে ডাকা হয়। কিন্তু, ওই নারীর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকায় দুপুরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমিন জানান, ওই নারী তার আত্মীয় এবং তাদের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই। তিনি আরও বলেন, ভোটকেন্দ্রে কেবল একবার আমি তার (নারী) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
রুহুল আমিনের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে, তিনি সুবর্ণচর উপজেলার ৫নং চরজুবিলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৪নং ওয়ার্ড সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম গৃহবধূকে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার দুপুরে তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধর্ষণের অভিযোগটি নিশ্চিত করেন বলেন,এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে ।
চর জব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় একটি মামলা করেছেন। অভিযুক্ত একজনকে আটক করা হয়েছে।