১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে সিরাজগঞ্জ শত্রু মুক্ত হয়।  তাই দিনটি সিরাজগঞ্জবাসীর স্মরনীয়। ৭১ এর এপ্রিল মাসে পাক বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। পাক বাহিনী এ শহরে প্রবেশের আগের দিনগুলোতে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করে সিরাজগঞ্জে হানাদার মুক্ত রেখেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। উল্লাপাড়া উপজেলার ঘটিনা ব্রিজে দীর্ঘ সময় ধরে এক সম্মুখযুদ্ধে মুক্তি বাহিনী পাক বাহিনীর কাছে পরাজিত হয় এবং শহীদ ও আহত হয় অনেকেই। পাক হানাদার বাহিনী চালায় নানা রকম নিষ্ঠুর নির্যাতন, হত্যা ও অগ্নিসংযোগসহ অনৈতিক কাজের মাধ্যমে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে ফেলে গোটা শহর। এমন জঘন্য এ নিষ্ঠুর পাক বাহিনীরা ছড়িয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। চালায় তারা নিষ্ঠুর নির্যাতন ধর্ষন ও হত্যাযজ্ঞ। তৎকালীন মহকুমার বাঘাবাড়ী, নওগাঁ, বড়ইতলী, ভদ্রঘাট, বাগবাটি, সমেশপুর, ছোনগাছা, ব্রহ্মগাছা, ভাটপিয়ারী, ঝাঐল, শৈলাবাড়ী ও মেছড়া সহ বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে বহু সংখ্যক পাকবাহিনী নিহত হয়। শহীদ ও আহত অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এ খন্ড ঘেরা যুদ্ধে ভাড়ী হয়ে ওঠে আকাশ পাতাল এবং মানুষের কান্নাও থেমে থাকেনি এক মহূর্তের জন্য। পাক বাহিনী যেন পরাজিত হয় সেজন্য মহান আল্লার কাছে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস যবিত পাক বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহর সহ বিভিন্ন স্থান দখল করে রাখলেও তাদের মূল গতিবিধি ছিল শহর এলাকায়। এ সময় বহু নিরীহ নারী পুরুষ পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত ও নিহত হয়। পাক বাহিনীর ক্যাম্পে বহু মা বোনকে আটক রেখে নানা রকম অনৈতিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় অনেককে। ৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রায় ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজগঞ্জ শহর থেকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষে উল্লেখিত স্থান সমূহে গেরিলা কায়দায় সাড়াশি আক্রমন শুরু করলে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ সিরাজগঞ্জ শহর ছেড়ে ১৩ ডিসেম্বর রাতে পালিয়ে যায়। প্রায় আটমাস ব্যাপি যুদ্ধে বহু পাকসেনা ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর এবং মুসলিম লীগের দলাল নিহত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এসব স্থানে যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবীব, সুলতান মাহমুদ, আঃসামাদ, ইয়াকুব আলীসহ নাম না জানা আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আহত হন বহু মুক্তিযোদ্ধা। পাক বাহিনী শহর ছেড়ে পালানোর সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে। আজকের এই দিনে সিরাজগঞ্জের আকাশে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংরাদেশের লাল সবুজ পতাকা। উল্লেখ্য প্রায়াত আমীর হোসেন ভুলু সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সহসর্বাধিনায়ক ছিলেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/সুজন সরকার/সিরাজগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here