ACC arrests Citycell CEO over bank loan embezzlementস্টাফ রিপোর্টার :: দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সিটিসেলের সিইও মেহবুব চৌধুরী।

শনিবার দুপুরে শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পর তাকে আটক করা হয় বলে শাহজালাল বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) সাইদুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু তথ্য ছিল। তার ভিত্তিতে তাকে আটকের পর দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

সিটিসেলের নামে এ বি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বুধবারই একটি মামলা করে দুদক।
ওই মামলায় মেহবুব চৌধুরী ছাড়াও সিটিসেলের অন্যতম মালিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের পাশাপাশি এ বি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
এরপর দুদক কর্মকর্তারা মেহবুব চৌধুরীকে খুঁজছিলেন।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, মামলার বাদী ও দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস ছালামের নেতৃত্বে একটি দল মেহবুব চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে।
আবদুস ছালাম বলেন, ‘বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে আমাদের খবর দেয়। এরপর তাকে আমরা গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় এনে রেখেছি।’ মেহবুব চৌধুরীকে রোববার আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান এই দুদক কর্মকর্তা।

সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলে সাত বছর ধরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে রয়েছেন মেহবুব চৌধুরী। তার আগে তিনি গ্রামীণফোনের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স ফাঁসকারী ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ২০১৩ সালে অফশোর ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যে নথি প্রকাশ করেছিল ‘অফশোর লিকস’ নামে, তাতে বাংলাদেশিদের মধ্যে মেহবুব চৌধুরীর নাম ছিল।
কলামিস্ট এবং টেলিভিশনের আলোচক আফসান চৌধুরী মেহবুব চৌধুরীর ভাই।

দুদকের দায়ের করা মামলায় সিটিসেলের মূল কোম্পানি প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিবিটিএল) চেয়ারম্যান মোরশেদ খানের স্ত্রী নাছরিন খানও আসামি। নাছরিন কোম্পানির পরিচালক।
১৬ আসামির মধ্যে পিবিটিএলের ভাইস চেয়ারম্যান আসগর করিমও রয়েছেন।

দেনার দায়ে গত বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের হাত ধরেই দেড় যুগ আগে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেবার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
সিটিসেল খাদে পড়ার জন্য মেহবুব চৌধুরীকেই দায়ী করেন অনেকে। তিনি দায়িত্ব নেয়ার সময় সিটিসেলের গ্রাহক ছিল ২৩ লাখ, যা গত বছর ৭ লাখে নেমে এসেছিল।

সিটিসেলের একজন সাবেক কর্মকর্তার অভিযোগ, মেহবুব চৌধুরী সিইও হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির ‘অধঃপতন শুরু’ হয়।
দুদকের মামলায় সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

অন্য আসামিরা হলেন_ এবি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইজার আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফজলুর রহমান, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ক্রেডিট) ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী, ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সালমা আক্তার, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মহাদেব সরকার সুমন।

এ ছাড়া ব্যাংকটির এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার সৈয়দ ফরহাদ আলম, সাবেক এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আরশাদ মাহমুদ খান ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, অপারেশনস বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহানুর পারভীন চৌধুরী, সাবেক এভিপি ও মহাখালী শাখা ব্যবস্থাপক জার ই এলাহী খান এবং রিলেশনশিপ অফিসার মো. কামারুজ্জামানকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্যে ও অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের জন্য প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাংক গ্যারান্টির আবেদন যাচাই-বাছাই না করেই প্রতারণা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ওই ঋণ অনুমোদন করা হয়।

‘ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নিয়মকানুন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার উপেক্ষা করে জামানতবিহীন ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করার জন্য এবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় চারটি বোর্ড সভার মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ‘অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন’ ব্যাংক গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়।’
পরে ওই ‘অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন’ ব্যাংক গ্যারান্টি ‘সহায়ক জামানত’ হিসেবে ব্যবহার করে পিবিটিএল ঢাকা ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা, সাবিনকো লিমিটেড থেকে ২৩ কোটি টাকা এবং ফিনিক্স লিমিটেড থেকে ৪৭ কোটি টাকাসহ এক বছর মেয়াদে মোট ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেয়।

কিন্তু পিবিটিএল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই ঋণ শোধ না করায় শর্ত অনুসারে এবি ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে সুদসহ ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার ৩৬৩ টাকা ওই ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করে।

ওই অর্থকে পিবিটিএলের আত্মসাৎ করা অর্থ হিসেবে বর্ণনা করে এজাহারে বলা হয়, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেয়ার সুযোগ না থাকার পিবিটিএল এবি ব্যাংকের ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ওই টাকা ঋণ নেয়। আর এবি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে সহযোগিতা করেন।

পিবিটিএল এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখায় জামানতবিহীন ঋণের জন্য আবেদন করার পর ২০১১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে বলে দুদকের অভিযোগ।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here