নয়া দিল্লি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানী নয়া দিল্লির লাল কেল্লায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় প্রতিবেশীদের গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘সার্কের সবাই মিলে আমরা অন্তত দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করতে পারি। এই সমস্যা আমাদের সবার।’

নাম না করে পাকিস্তানের উদ্দেশে বললেন, সংঘাতে না গিয়ে শান্তির পথে থাকাই শ্রেয়। মোদি বলেন, ‘সংঘাত কেন? আমরা তো একই সঙ্গে স্বাধীনতার লড়াই লড়েছি?’ তিনি ধর্ষণকে ‘ভারতের জন্য একটি লজ্জার উৎস’ অভিহিত করে বলেন, ‘ধর্ষণের কারণে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে।’

ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে একটি বুলেটপ্রুফ ঘেরাটোপ দিয়ে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রাখা হতো । মোদি তা হটিয়ে দিলেন। ভাষণ দেয়ার সময় তার কাছে লিখিত বক্তব্যও ছিল না।

লাল কেল্লায় উপস্থিত দশ হাজার মানুষের সামনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রধান সেবক হিসেবে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি আমি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়।’

বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাই। মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে বলে নিজের ইচ্ছেমতো দেশ চালাব না।’ আরো বলেন, ‘আমি নিজেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করি না। মনে করি আমি দেশের প্রধান সেবক।’

মোদি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার শক্তি দিয়ে দেশ শাসন করতে চাই না। বরং চাই ঐক্যমত্যের ভিত্তি। পাশাপাশি ভারত গঠনে অবদানের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের শ্রদ্ধা জানান তিনি।

সরকারে ন্যূনতম লোকবল নিয়ে শাসন পরিচালনায় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের নীতিতে বিশ্বাসী মোদি বলেন, তিনি মনে করেন তাঁর সরকারের সব কর্মচারীই যথেষ্ট দক্ষ এবং তারা জনগণের সেবায় নিজেদের এই দক্ষতা কাজে লাগাতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

গ্রামীণ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নতিতে তিনি সাংসদদের নতুন দায়িত্ব দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেই দায়িত্ব হলো প্রত্যেক সাংসদকে নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় একটি করে আদর্শ গ্রাম গড়তে হবে। পরে এই দায়িত্ব বিধায়ক স্তরেরও ছড়িয়ে দেয়া হবে।

মোদি ভারতীয় সব নাগরিকের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যাপারে নিজের পরিকল্পনার কথাও জানান। মোদি বলেন, ‘আমাদের থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীর জনধন প্রকল্প। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দরিদ্রতম ব্যক্তিও নিজের ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে।’ ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা এ দেশে আসুন। উৎপাদন করুন। যেখানে খুশি বেচুন। আমাদের দক্ষ ও প্রতিভাবান শ্রমিক রয়েছে।’

কৃষকদের প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার ঘটনায় ঋণদাতাদের সুদের চক্করে পড়ে অর্থ ফেরত দিতে না পারাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ভারতীয় কৃষকেরা প্রায়ই আত্মহত্যা করেন। কারণ তারা ঋণদাতাদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেন।

ধর্ষণের ঘটনাগুলো ভারতের জন্য একটি লজ্জার উৎস বলে উল্লেখ করে বলেন, ধর্ষণের কারণে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে।

ভ্রুণ হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, ‘আমি মা, বাবাদের অনুরোধ করছি কন্যাভ্রুণ হত্যা করবেন না। আমি এরকম পরিবারও দেখেছি যেখানে একটি মেয়ে, পাঁচটি ছেলের থেকে বেশি সফল হয়েছে।’

সন্ত্রাসের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস থেকে আমরা কিছুই পাইনি।তাই সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করা সময়ের দাবি। জাত বা ধর্মীয় সন্ত্রাস যাই হোক না কেন তা দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা। আমরা যেন এইসব থেকে মুক্ত হতে পারি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here