ছাদেকুল ইসলাম রুবেল।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের বালাআটা বাজার সংলগ্ন সাগরের পাড় এলাকায় সার্কাসের নামে চলছে প্রকাশ্যে জুয়া। প্রতিদিন সেখানে ‘ফর-গুটি-ডাবু’র দুটি জুয়ার আসরে লাখ লাখ টাকার খেলা হচ্ছে।

3এতে শুধু স্থানীয়রাই নয় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মটর সাইকেলসহ অন্য যানবাহন হাঁকিয়ে প্রচুর লোক জুয়া খেলতে আসে। হাজার হাজার টাকা খুইয়ে অনেকে আবার সর্বশান্তও হয়।

অনেককে বাড়ির ধান-চাল এবং অন্য সম্পদ বিক্রি করে জুয়া খেলতে দেখা যায়। অনেকে আবার নিজের স্ত্রীর গহনাপাতি বিক্রি করেও জুয়া খেলে। এ নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন পরিবারে কলহের সৃষ্টি হচ্ছে। রাত ১০টায় পর থেকে সকাল পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে এ জুয়া খেলা চলে।

এলাকাবাসি অভিযোগ করেছে, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী যুবক সরকারি দলের কিছু ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে সার্কাসের অনুমতি নেয়। ঈদের দিন থেকে শুরু করে আগামী ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রকম বেআইনী কর্মকান্ড না চালানোর প্রতিশ্‌রুতিতে ওই অনুমতি দেওয়া হয় তাদের।

এলাকাবাসি আরও জানায়, দর্শক অভাবে প্রতিদিন সার্কাস চলে না। কিন্তু জুয়ার আসর নিয়মিত চলে। থানা পুলিশকে এসব বন্ধে আবেদন জানিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি। বরং পুলিশের লোকজন নিয়মিত বখরা নিতে সেখানে যায়। পুলিশের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতেই জুয়া চালানো হচ্ছে বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তারা আরও জানান, শুধু পুলিশ কেন, রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই এ জুয়া খেলা চলছে।

সার্কাসের মালিক ঝিনাইদহের জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুধু সার্কাসের আয়ে দল চালানো সম্ভব নয়। তাই জুয়া চালাতে হয়।

তিনি বলেন, আগামী ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সার্কাস চালানোর অনুমতি পাওয়া গেছে। আরও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে। অনুমতি মিললে আরও কিছুদিন সার্কাস চালানো হবে।

এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সদর ইউএনও মো. আশরাফুল মমিন খান ওই এলাকায় একটি বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাকে জুয়া বন্ধের আবেদন জানান। এসময় সার্কাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে আশরাফ হোসেন নামে এক জুয়াড়িকে আটক করা হয়। জুয়া না চালানোর শর্তে তাকে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জুয়ার ব্যাপারে লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল বলেন, সম্প্রতি গাইবান্ধাসহ সারাদেশে যখন বন্যা চলছিল তখনও এখানে সার্কাস এবং জুয়া চলেছে। বন্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। এই খেলা এলাকার জন্য বিষফোড়া। অবিলম্বে এসব বন্ধের দাবি জানান তিনি।

অপরদিকে সদর থানার ওসি একেএম মেহেদী হাসান বলেন, সার্কাস এলাকায় জুয়া চলছে। তা তার জানা নেই। ঘটনা সত্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা যায়,  গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিনটি স্থানে জুয়াখেলা চলছে। জুয়াড়িদের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ওই তিনটি স্থানে তিন তাস, ফর ও ডাব্বুসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম দিয়ে জুয়াখেলা চলছে। স্থানগুলো হচ্ছে, উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের আমতলী বাজার, গুমানিগঞ্জ ইউনিয়নের ফুলপুকুরিয়া ও তালুককানুপুর ইউনিয়নের বালুয়া বাজার। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় পুলিশের সহযোগিতায় এসব জুয়া চলছে। এছাড়া পলাশবাড়ি উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের টাকিয়ার বাজারেও প্রকাশ্যে জুয়া খেলা চলছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

পলাশবাড়ীর টাকিয়ারবাজার ও ঘোড়াবান্ধায় জামকালো অনুষ্ঠানের মাধ্রমে জুয়ার রমরমা ব্যবসা চলচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here