সুন্দরবনের মধু সব শ্রেনীপেশার মানুষর আকর্ষণ করে। মধু পিপাশুদের বনের মধু পেলে এখনও জিভে জল আসে। তবে মৌমাছির মধু সংগ্রহের মতোই তিল তিল করে মধুচাষ শিল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের গ্রামীণ জনপদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে সমপ্রসারণের প্রক্রিয়াটি চলেছে চাষী থেকে চাষীতে। অনেক বেকার তরুণ নিজের অর্থ, উদ্ভাবনী চিন্তা ও আত্মবিশ্বাসকে বিনিয়োগ করেছে মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন খাতে। এভাবেই মধু চাষে রীতিমতো বিপব ঘটিয়েছেন এক উদ্যমী যুবক জিয়াউর রহমান (৩০)। নিজের মেধা, সৃষ্টিশীলতা ও নিবিড় পরিশ্রম তাকে এনে দিয়েছে এক ঈর্ষণীয় সাফল্য। কলারোয়ার বিস্তীর্ন সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে আসা জিয়াউর রহমান সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন ঘেষা হরিনগর গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর পুত্র। লেখাপড়ার তার সুযোগ মেলে এসএসসি পর্যন্ত। তারা ২ ভাই ও ৪ বোন। জিয়াউর বিবাহিত। তার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। দারিদ্রের কারণে তিনি ছোটবেলা থেকেই নামেন জীবিকার সন্ধানে। অন্যদের দেখাদেখি বেছে নেন গভীর সুন্দরবনে বসে মৌচাষের কাজ। কিন্ত সেখানে নানা রকম জীবনের ঝুকি ও ঝামেলা। বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৬ সালে তিনি  মাত্র ১০ টি বাক্স কিনে যাত্রা শুরু করেন মৌচাষের। তার মূলধন ছিলো ৪০ হাজার টাকার মতো। বর্তমানে তার বাক্সের সংখ্যা ১৬৫ টি। সমপ্রতি কলারোয়া শেখ আমানুলাহ ডিগ্রী কলেজের পশ্চিম পার্শ্বে গনপতিপুর মাঠে সরিষা ক্ষেত সংলগ্ন জমিতে বাক্স পেতে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। জিয়াউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমান সময়ে (অগ্রহায়ন-মাঘ) সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায়। প্রতি বাক্সে সপ্তাহে এ সময় মধু পাওয়া যায়, ৩-৪ কেজি। বাজার মূল্য থাকে ১৭০-২০০ টাকা। প্রায় সব মধু ঢাকার এপিসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে বাজারজাত করা হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ সমস্যা সংকুল। এ সময় মধু কম পাওয়া যায়। এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউর বলেন, বর্তমানে তার সরঞ্জামসহ মূলধনের পরিমাণ ১০ লাখ টাকার মতো হয়েছে। মধু সংগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৪ বর্গকিলোমিটার দুর থেকেও এক একটি মৌমাছি ঘোরাঘুরি করে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তা মৌচাকে জমা করতে পারে। ১ সপ্তাহ পর পর মধু সাধারণত সংগ্রহ করা হয় হস্তচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে পরিমান মতো মধু পাওয়া গেলেও সমস্যা হয়। এ পদ্ধতিতে ক্ষেত্র বিশেষ মৌমাছি, ডিম ও শুক্রকীটের ক্ষতি হতে পারে। প্রতিবার ৪টি করে চাক দেয়া যায় যন্ত্রে। প্রথমে মোম দিয়ে তৈরি শিট বাক্সে স্থাপন করে দিলে মৌমাছি সেখানে চাক তৈরি করা শুরু করে। প্রতি বাক্সে ১ টি করে রানী মৌমাছি থাকে। রানীর নিরাপত্তা বিধানে থাকে শ্রমিক ও সৈনিক মৌমাছি ছাড়াও মধু আহরণকারী মৌমাছি। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪ ধরণের মৌমাছি রয়েছে: এপিস ডরসেটা, এপিস সেরেনা, এপিস ফ্লোরিয়া ও এপিস মেলিফেরা। আমাদের দেশে রবিশস্য, গাছপালা ও ফুল-ফলে মৌচাষ করা হয়। অনেক কৃষক না জানার করনে মনে করেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌচাষ করলে ফলন কমে যায়-এটি সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত ধারণা। এ বিষয়ে কলারোয়া বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রভাষক প্রহ্লাদ কুমার সাহা জানান, ফসলের ক্ষেতের পাশে মৌচাষ করলে কোন বাধা ছাড়াই ফুলের পরাগায়ন সম্ভব হয়। একই সাথে তুলনামূলক ফসলের বেশি ফলনসহ দ্বিতীয় ফসল হিসেবে মধু উৎপাদন সম্ভব হয়। জিয়াউর রহমান আজ পরিপূর্ণ এক সফল ও স্বাবলম্বী মৌচাষী। তিনি নিজে মৌচাষ করে ভাগ্য বদলিয়েছেন। অপরের ভাগ্য বদলেও সহায়তা করছেন। বর্তমানে তিনি কলারোয়ায় মধু সংগ্রহের কাজ করছেন ৬ সদস্যের একটি দল নিয়ে। পরবর্তীতে অন্য কোথাও একই কাজ করবেন তিনি। এভাবে নিজের ভাগ্য ও সঙ্গীয় দলের সদস্যদের ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে নিরন্তর চুটে চলবেন- জিয়াউর রহমান। তার মত আরো সাবলম্বী হচ্ছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নাজমুল হক/সাতক্ষীরা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here