সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ::

প্রতিবন্দ্বী স্কুল ও বিদ্যালয়গুলো এমপিওভুক্ত করার দাবিতে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার এক বিশেষ সভা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি প্রতিবন্ধী স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫ টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আহবায়ক আরিফুর রহমান অপু।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীরা মানবগোষ্ঠীর সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া সন্তান। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জীবনের মান উন্নয়ন করে মূলধারায় নিয়ে আসা সরকারের দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন ভাতার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যেই শিক্ষকেরা অনেক কষ্ট করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করছেন, তারা কেন বেতন-ভাতা পাবেন না? কেন তাদের মানুষের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হবে?
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রায় ২ হাজার ৬৯৭টি প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজার। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। স্কুলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাও দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও তা অদ্যাবধি বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত হলেও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো বঞ্চিত হয়ে আসছে। আর বঞ্চিত হতে চাই না। এই সভায় থেকে আমরা স্কুল ও প্রতিবন্দ্বী বিদ্যালয়গুলোর এমপিওভুক্তি চাই। সরকারি বেতন ভাতা চাই। এছাড়াও সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহৎ আন্দালন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক ও পাটকেলঘাটা মুক্তিযোদ্ধা পারাবত বিশেষ প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক এটিএম শাহ আলম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। অথচ দেশের হাজার হাজার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত। এমনকি প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের জন্য সরকার অনেক কর্মসূচি নেওয়ার কথা বললেও তাদের শিক্ষার বিষয়টি অবহেলিতই থেকে গেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেরা ঠিকমতো বেতন-ভাতা পেলেও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো কীভাবে চলছে, সেই খোঁজ প্রতিবন্ধী হিতৈষী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা রাখেন না।
রাখলে ইতিপূর্বে আমাদের প্রতিবন্ধিতা-সম্পর্কিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি, বিদ্যালয় নিয়োগের তারিখ  থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান, সব বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে আধুনিক সরঞ্জামসহ থেরাপি কেন্দ্র চালু এবং শিক্ষাজীবন শেষে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবিতে আন্দোলন করতে হতো না। এই স্কুল ও বিদ্যালয়গুলোকে সরকার স্বীকৃতি ও এমপিভুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও তা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি। অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উদ্যোগ গ্রহণ না করলে শিক্ষক-কর্মচারী বৃহৎ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় কওে নিতে বাধ্য হবে।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সদস্য মো. ¯্রাবন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা শাখার আহবায়ক মিতা দে, কেন্দ্রীয় সদস্য এরফান খন্দকার, সুকান্ত ঘোষ ট্রফি, ইসরাত জাহান প্রমূখ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব ও কাথন্ডা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সুইট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনর রশিদ, সদস্য ও গয়েশপুর এস.কে.এস বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম, রিভো হেনরী মন্ডল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হাসানুর রহমান প্রমূখ।
এসময় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক মইনুল ইসলাম, মো: রেজাউল ইসলাম, আবু হানিদা, মো: খোরশেদ আলম, মো: মাহবুব, মো: মাকসুদ, মো: আসাদ ও মো: আ: রশিদসহ জেলার প্রায় ১৭ টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here