জাহিদ আবেদীন বাবু।
দাঁড়াও পথিক-বর জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল ! এ সমাধি স্থলে.
বাংলা সাহিত্যে অমিতাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকাব্যের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৩ তম জন্মবার্ষিকী। এজন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কবির জন্মভূূমি সাগরদাঁড়ীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চলছে সপ্তাহব্যাপী “মধুমেলা”। গত ২১ জানুয়ারি এ মেলা উদ্ভোধন করবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি। আর এ মেলা চলবে ২৭ জানুয়ারী পর্যন্ত। এসএসসি পরীক্ষার কারণে মেলা ৪ দিন পূর্বে ২১ জানুয়ারী উদ্ভোধন করা হয়। এজন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতিদিন মধুমঞ্চে অনষ্ঠিত হচ্ছে কবির জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান।
যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন সাগরদাঁড়ী গ্রামের দত্ত পরিবারে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি (বাংলা ১২ মাঘ) জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা রাজ নারায়ন দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রসন্ন কুমার দত্ত ও মহেন্দ্র দত্ত নামে দু’ভাই থাকলেও তারা অল্প বয়সে মারা যায়। অসাধারণ মেধার অধিকারী মধুসূদন দত্ত ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খাম খেয়ালি, বিলাস প্রিয় ও যশ খ্যাতির মহে আচ্ছন্ন। মধুসূদন দত্ত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রম্নয়ারি খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। যা তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিতর এতটাই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে, তিনি হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। শিবপুর বিশপস্ কলেজে ভর্তি হতে হয়। মাদ্রাজে থাকাকালে নীলকর ডুগাল্ট্ ম্যাকটাভিসের আশ্রিত কন্যা রেবেকা ম্যাকটাভিসকে বিবাহ করেন। এরপর তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক ইংরেজ অধ্যাপকের কন্যা হেনরিয়েটাকে বিবাহ করেন। শিক্ষা জীবনে মধুসূদন গ্রীক, ফার্সি, জার্মান, ল্যাটিন, সংস্কৃত ভাষা সহ বহুভাষা রপ্ত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ ’। এ ছাড়া রচনা করেন কাব্য ‘তিলোত্তমা সম্বব, ‘ব্রজাঙ্গনা’ ‘বীরঙ্গনা’ চতুদর্শপদী কবিতাবলী, নীতিমূলক কবিতা, নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ ‘পদ্মাবর্তী’ ‘কৃষ্ণ কুমারী’ ‘মায়া কানন’, প্রহসন ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, উপকথা-রসাল স্বর্ণ লতিকা, অশ্ব ও কুরঙ্গ, কুক্কট ও মনি, মেঘ ও চাতক, সিংহ ও মশকী। ব্যাঙ্গ রচনা- রোগ শয্যায়, দুর্যোধনের মৃত্যু। ইংরেজী রচনাবলী-ঞঐঊ ঈঅচঞওঠঊ খঅফওঊ, ঞঐঊ ঠওঝওঙঘ ঙঋ ঞঐঊ চঅঝঞ প্রভূতি মধুসূদনের অমর সাহিত্য কর্ম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ‘সমাধি লিপি’ নামে আট লাইনের একটি কবিতাটি লিখেছিলেন এবং বলেছিলেন ‘আমার মৃত্যুর পর আমার সমাধির উপরে লিখে দিও সমাধি লিপি কবিতাটি’। কবিতাটি হলো
“দাঁড়াও পথিক-বর জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল ! এ সমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যে মতি
বিরাম) মহীর পদে মহাদ্রিাবৃত
দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসূদন।
যশোর সাগরদাঁড়ী কপোতাক্ষ-তীরে
জন্মভূমি জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজ নারায়ন নামে জননী জাহ্নবী”।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত অসুস্থ্য হয়ে ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতাস্থ আলীপুর ইউরোপীয় জেনারেল হাসপাতালে বেলা ২ টার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩০ জুন সেন্ট জেমস চার্চ এবং ধর্মযাজকের উদ্যোগে খৃষ্টীয় রীতি অনুযায়ী কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের সমাধি স্থলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পূর্ণ মর্যাদায় কবির মরদেহ সমাধি করা হয়।
কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী চলা মধুমেলায় ঘর সাজানোর আসবাবপত্র, রকমারী মৃৎশিল্প, কাঠ, বাঁশ, বেতের তৈরি পণ্য, যাত্রাপালা, সার্কাস, নাগরদোলা, মৃত্যুকূপ, কৃষিপণ্যসসহ নানা মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী চলছে। মহাকবির পৈত্রিক ভিটা, কবির স্মৃতি বিজড়িত বিদায় ঘাট, কাঠ বাদাম গাছ, ফুলে ফুলে সজ্জিত মধুপ্রল্লীতে মধুপ্রেমিকরা ভীড় করছে।