ঢাকা : সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাস-সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের দেশে সাম্প্রদায়িকতা চলতে পারে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাস-সহিংসতা রুখে দাঁড়াও : রাষ্ট্রিক ও নাগরিক করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটি জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করে।

বক্তারা এ সময় তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি, আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান। লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরা হয় বেশ কিছু দাবিও। বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সংখ্যালঘু বলা মানেই তাদের আলাদা করে দেওয়া। আমাদের দেশে অনেক ধর্মের মানুষ বাস করেন। কে কোন ধর্ম পালন করছে সেটা মুখ্য নয়।

তিনি আশা করে বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। আশা করব এ বিষয়ে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দেবে। বাংলাদেশের মাটি খুঁড়ে দেখলে সব ধর্মের মানুষের রক্ত পাওয়া যাবে। তাহলে কেন আলাদা করে এক ধর্মের মানুষের ওপর সহিংসতা চালানো হচ্ছে।

বৈঠকে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ১৯৭১ সালের মুহুর্ত থেকে আমরা এখনো বের হয়ে আসতে পারি নি। আমাদের প্রধান দায়িত্ব শান্তিতে ঘুমানো। কিন্তু একটা হিন্দু পরিবারে যখন আক্রমণ হয় তখন তো আর শান্তি থাকে না।

তিনি তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সমস্যাটা আমাদের সবার। এক্ষেত্রে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।

সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দেশে কোনো সাম্প্রদায়িকতা থাকতে পারে না। সেটা যদি থাকে তাহলে আমরা যে স্বপ্ন, রুপরেখা নিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছিলাম তা থেকে সরে আসা হবে। সেখান থেকে বিচ্যুতি ঘটবে। অতীতের আন্দোলন থেকে বুঝতে পারি যে প্রত্যেকের নিজ নিজ ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির স্বাধীনতাকে কখনো আঘাত করি নি। আমাদের দেশ হবে সব মানুষের।

রাষ্ট্রের যেমন প্রধান দায়িত্ব সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ঠিক তেমনি নাগরিকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেটাও পালন করতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবকিছু এক করে নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনো বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না।

বৈঠকে সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বক্তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিরোধ যদি আমরা না করতে পারি তাহলে আমাদের মানুষ হিসেবে পরিচয় না দেওয়াই ভালো।

অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পান্না লাল দত্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেনারেল সেক্রেটারি অনুপম রায়। সঞ্চালনায় ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট অজয় দাশগুপ্ত।

লিখিত বক্তব্যে বেশ কিছু দাবি উথাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে। দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিশেষ আদালত গঠন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. অজয় রায়, ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ড. কাজী খলীকুজ্জামান, ড. সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, অ্যারোমা দত্ত, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, তানিয়া আমীর, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন বৈঠকে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here