ঝিনাইদহ : গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন ঝিনাইদহ জেলার  ৪টি উপজেলার ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বই, ক্লাসরুম,বেঞ্চ,আসবাবপত্র পুড়ে গেলেও  এখনো সে গুলো মেরামত করা হয়নি।

কবে স্কুল মেরামত করা হবে তাও যানে না শিক্ষকরা। যার কারনে বাধ্য হয়ে ঐ সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনো খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। এই ঘটনায় ২৩টি মামলায় ৮ হাজার জনকে আসামী করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন আসামীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দিলিপ কুমার বনিক জানান, ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার ঝিনাইদহের অনেক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  নির্বাচনী সহিংসতায় দুর্বৃত্তরা জেলার মহেশপুরের  গাড়াবাড়িয়া, কোলা, রামচন্দ্রপুর, আলমপুর, বাশবাড়িয়া, মকধজপুর,পদ্মপুকুর,ষড়াতলা, শ্রীরামপুর, দারিয়াপুর, নওদাগা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৪টি, কোটচাদপুরের মামুনশিয়া, বলাবাড়িয়া, ফুলবাড়ি,সলেমানপুর ও পাসপাতিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি, সদর উপজেলার বিষয়খালী ও মহারাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শৈলকুপা উপজেলার ললিতমোহন ভুইয়া সহ মোট ২২টি প্রাথমিক  বিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে বিদ্যালয়ের চেয়ার,বেঞ্চ,আসবাবপত্র,নতুন বই পুড়িয়ে দেয়। তিনি আরো জানান, গত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু  শ্রেণীকক্ষে বসার ব্যবস্থা না থাকায়  ঐসব বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলের মাঠে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হচ্ছে। শিক্ষা অফিসার জানান, ইতোমধ্যে এলজিইডি প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ স্কুলগুলোর ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে চাহিদাপত্র তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই স্কুলের সংস্কার কাজসহ নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু হবে।

মহেশপুর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার রায় জানান, বিদ্যালয়ের সব শ্রেৃণী কক্ষের বেঞ্চ পুড়ে যাওয়ায় আমরা আপাতত স্কুলের বাইরে মাঠে ক্লাস নিচ্ছি। তিনি আরো জানান, যদি স্কুল বন্ধ রাখা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা ঠিক মতো পড়াশোন করতে পারবে না।

এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐশি খাতুন জানায়, দুর্বৃত্তরা আমাদের স্কুলে রাতে  নির্বাচনের  রাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।  আমরা নতুন ক্লাসে উঠেছি নতুন বই পেয়ে খুশি হয়েছি কিন্তু স্কুল পুড়ে যাওয়া খুব খারাপ লাগছে। বাইরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে।

শৈলকুপা উপজেলার ললিত মোহন ভুইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার উদ্দিন জানান, দুবর্ুৃত্তদের দেওয়া আগুনে বিদ্যালয় পুড়ে যাওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দীন মোহাম্মদসহ জেলা শিক্ষা অফিসার, এলজিইডির প্রকৌশলীরা বিদ্যালয় পরিদর্শণ করে গেছেন। তারা জানিয়েছে খুব তাড়াতাড়িই এগুলো মেরামত করা হবে এবং শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হবে।

ললিত ভুইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মীর রবিউজ জামান জানান, এই বিদ্যালয়ে ৪২৫জন শিক্ষার্থী পড়াশোন করে। বর্তমানে তাদের বসার জায়গা না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

ললিত ভুইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুনের অভিভাবক খন্দকার কামরুল ইসলাম জানান, আমার মেয়ে এবার নুতন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সে প্রথম যেদিন স্কুলে বই নিতে যায় সেই দিন গিয়ে দেখে তার বিদ্যালয় আগুনে পোড়া, বসার জায়গাও নেই। তিনি আরো জানান, এই সব দৃর্বুত্তরা এলাকার চিহ্নিত। পুলিশ তাদের আটক করছে না।

এদিকে ২২টি স্কুলে অগ্নিসংযোগ,ভাংচুর এর ঘটনায় মহেশপুর,কোটচাদপুর,ঝিনাইদহ সদর ও শৈলকুপা থানায় প্রায় ৮ হাজার জনকে আসামী করে ২৩টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু ঐ সব মামলায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, নির্বাচনের সহিংসতায় ঝিনাইদহের অনেক গুলো বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের আটকের জন্য অভিযান পরিচালনা করছি কিন্তু যাদের নামে  মামলা হয়েছে তারা  এলাকায় না থাকায় আটক করা সম্ভব হচ্ছে না।

আহমেদ নাসিম আনসারী/

ঝিনাইদহ

০১৭১৭৫৮১৬৩৬

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here