জামালপুর : ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। এই দিনে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে তৎকালীন জামালপুর মহকুমার সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত হয়।

১৯৭১ সলের ৬ ডিসেম্বর ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব সেক্টর এবং সেক্টর হেড কোয়াটার ক্লোজ করার পর সেকেন্ড সেক্টর কমান্ডার স্কেয়াড্রন লিডার এম. হামিদুলাহ খান যুদ্ধকালীন কমান্ডার সুবেদার নূরুল ইসলামকে সরিষাবাড়ী দখলের নির্দেশ দেন। নূরুল কোম্পানী ও নাজিম কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যায় চর জামিরা পৌছান। পরদিন পূর্ব থেকে অবস্থানরত রশিদ কোম্পানী, লুৎফর রহমান লোদা কোম্পানী, ফজলুর রহমান কোম্পানী মিলে এলাকার রাজাকার ও আলবদরদের অস্ত্রসহ আটক করে থানায় নিয়ে যান।

৮ ডিসেম্বর যুদ্ধকালীন কমান্ডার নূরুল ইসলাম, তৎকালীন এমপি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মালেক, চেয়ারম্যান আঃ মজিদ এর নেতৃত্বে সরিষাবাড়ী থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিস্তু তখনো ৪ নং আওনা ইউনিয়নের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এলাকায় হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ অব্যহত ছিল।

মুক্তিবাহিনীর হামলা আর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পিছু হটে ১৪৬ জন পাক সেনা জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়।

১১ ডিসেম্বর রাতেই নাজিম কোম্পানী, আনিস কোম্পানী, রশিদ কোম্পানী, নূরুল কোম্পানী, লুৎফর কোম্পানী ও ফজলু কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে অভিযান চালান। সারারাতের অভিযান ও সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সকল পাক সেনাদের পাকড়াও করতে সক্ষম হন। পরদিন ১২ ডিসেম্বর ভোরে মিত্রবাহিনীর হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। ওইদিনই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তৎকালীন এমপি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মালেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ঐতিহাসিক গণময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সরিষাবাড়ী থানা শত্রু মুক্ত ঘোষনা করেন। সরিষাবাড়ীর আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে বিজয়ের গান। উলাসে মেতে ওঠে মুক্তিকামী মানুষ।

সরিষাবাড়ী মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিজয় মিছিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও প্রীতিভোজসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

ছাইদুর রহমান/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here