ঢাকা: আজ ৫ জানুয়ারি সোমবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের ২য় মেয়াদের বর্ষপূর্তি। ফলে এটি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বালাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনও বটে। গত বছরের এই দিনে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং ৩য়বারের মত সরকার গঠন করে। বস্তুত একাত্তরে যে চেতনা এবং রাজনৈতিক শপথে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল সে চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র অর্জন বিলীন করার আকাশ সমান ষড়যন্ত্র থেকে জাতি রক্ষা পায় এদিন। জাতির কাছে এ দিন তাই গণতন্ত্রের বিজয় দিবস।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো আজ এই দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসাবে পালন করবে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ জেলা ও উপজেলা শাখায় দুপুর আড়াইটায় একযোগে আনন্দ র‌্যালি ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে।
এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। তখনকার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিক জোটগুলো এরপর থেকেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালুর দাবিতে আন্দেলন শুরু করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিশেষ করে ভয়াল নাশকতা, ধ্বংসযজ্ঞ, নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা, লাগাতার অবরোধ-হরতালের নামে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে পুরো দেশকেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয় । নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ বাসে-ট্রেনে আগুন, ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলাসহ এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াত জোট।
স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে সাথে নিয়ে ভোটের আগের দিন বিএনপির সন্ত্রাসীরা আগুনে পুড়িয়ে দেয় ১১১টি ভোটকেন্দ্র। নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনতাই হয়, কুপিয়ে হত্যা করা হয় নির্বাচনী কর্মকর্তাকে। ভোটের দিনও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক নির্বাচনী কর্মকর্তা। মৃত্যুও বরণ করেছেন কেউ কেউ। একের পর এক হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, হুমকি-ধামকির পরও জনগণ ২০১৪ সালের এই দিনে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদান করার জন্য ভোটকেন্দ্রে যান। আতঙ্ক, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে শতকরা ৪২ ভাগ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সে সময় আওয়াম লীগ অভিযোগ করে, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের নির্বাচন বানচাল করে দেশে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। দেশে আবার ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ মতো আরেকটি অগণতান্ত্রিক সরকার তাদের কাম্য ছিল। দৃঢ়তার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তখন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ় নেতৃেত্ব সেই চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশে সেদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসনে বিজয়ী হয়। জাতীয় পার্টি ৩৪টি এবং আওয়ামী লীগের শরিক ওয়াকার্স পার্টি ৬ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। ওইদিন নির্বাচন না হলে ‘মার্শাল ল’ হতো বাংলাদেশে। দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়তো। এ নির্বাচন না হলে দেশে গণতন্ত্র থাকতো না। বাংলাদেশের অবস্থা থাইল্যান্ডের মত হত। আমরা কোথাও কোন সভা সমাবেশ করতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল বাধাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশর গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই আমরা এ দিবসকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসাবে পালন করবো।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবু উল আলম হানিফ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। নির্বাচিত ব্যক্তিরাই দেশ পরিচালনা করবে-এ পদ্ধতি নিশ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, জায়ামাত-শিবির নিয়ন্ত্রিত বিএনপি অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সাথে নিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চায়। জনগণ তাদের আর ওই সুযোগ দেবে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here