তানভীর আহমেদ চৌধুরীতানভীর আহমেদ চৌধুরী ::

পৃথিবীটা অনেক স্বার্থপর। পৃথিবীর এই স্বার্থপরতায় কষ্ট পায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া শুধু কঠিন না অনেকটা অসম্ভব। স্বার্থের মুড়কে আবৃত পৃথিবীর প্রতিটি কর্মের পিছনে যেমন একটা না একটা উদ্দেশ্য থাকে তেমনি প্রতিটি সম্পর্কের মাঝেও কিছু স্বার্থ থাকে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার কোন পথ নেই।

ঈশ্বরই যখন স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয় তবে আমরা কিভাবে স্বার্থ-মুক্ত জীবন করব। বিধাতাও এই বিশ্বলোক সৃষ্টি করেছিলেন তার আপন উদ্দেশ্য সামনে রেখে। সৃষ্টিকর্তার পৃথিবী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তার প্রতি মর্ত বাসির উপাসনা। আবার মর্ত বাসির উপাসনাও নিঃস্বার্থ নয়। ঈশ্বরের উপাসনার মধ্যমে স্বর্গগমন মর্ত বাসির স্বার্থ।

সুতরাং সৃষ্টিকর্তার সাথেই যেখানে আমাদের সম্পর্ক স্বার্থের ডোরেরে বাধা তবে মর্তলোক কি করে পারস্পরিক স্বার্থ মুক্ত থাকবে। তাই মানুষের চরিত্রে স্বার্থপরতা খারাপ কিছু নয়। একজন মানুষ সবকিছুর আগে তার নিজের কথা ভাবাটাই স্বাভাবিক।

সম্পর্ক এবং স্বার্থ দুটি খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। আদমের স্বার্থে বিধাতা হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, আবার হাওয়ার স্বার্থে আদমকে। আর এর মধ্যে বিধাতার স্বার্থ ছিল তার সৃষ্টির বুকে মনুষ্য জাতির আবাদ করা (যদিও বিধাতা চাইলে অন্য যেকোনো ভাবেই তা করতে পারতেন)।

সম্পর্ক ও স্বার্থস্বার্থ ছাড়া যেমন সম্পর্ক হয় না তেমনি সম্পর্ক না থাকলে স্বার্থও আসে না। যেকোনো নতুন সম্পর্ক কিছু স্বার্থ কেন্দ্রিক। ধরুন, দুজন তরুণ তরুণী পরস্পরকে ভালবাসে। তারা কেন পরস্পরকে ভালবাসে? অনেক তরুণীর মধ্যে তরুণ কেন ঐ নির্দিষ্ট তরুণীটিকে ভালবাসেন, আর তরুণীটি কেন ঐ নির্দিষ্ট তরুণটিকে ভালবাসেন? ভালবাসা মূলত ভাল লাগা থেকে হয়।

আর ভাল লাগার স্বার্থ একটি সম্পর্কের জন্ম দেয়। হয়ত সেই নির্দিষ্ট তরুণীটি অনেক রূপসী, আর তার রূপের স্বার্থে তরুণটি তাকে ভালবাসেন। অথবা তার আচরণের কিছু দিক তরুণটিকে মুগ্ধ করে, যা কিনা তরুণটির তার জীবনসঙ্গী হিসেবে একটি মেয়ের মধ্যে খোঁজেছিল। তরুণীটির ক্ষেত্রেও উল্লেখিত স্বার্থগুলির যেকোনো একটির কারণেই হয়ত সে তরুণটিকে ভালবাসে।

আবার এমনও হতে পারে তারা দুজন দুজনের ভালবাসা পাওয়ার স্বার্থে পরস্পরকে ভালবাসেন। এইসব স্বার্থ  ছাড়া অনেক সময় আর্থিক স্বার্থও সম্পর্কের কারণ হতে পারে। আর্থিক নিরাপত্তা যে কোন সম্পর্কের প্রথম এবং প্রধান প্রয়োজনীয় বিষয়। এর কোনটি সম্পর্কের ভালবাসার নির্ণয়ের মাপ কাঠি নয়।

সুতরাং স্বার্থ থাকলে সম্পর্কে ভালবাসা থাকবে না আর ভালবাসা থাকলে সম্পর্কে স্বার্থ থাকতে পারবেনা এই কথা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন।

আমি আগেই বলেছিলাম স্বার্থ ছাড়া সম্পর্ক হয় না ওই স্বার্থগুলোর উপস্থিতি দুটি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলে। প্রায় প্রতিটি সম্পর্ক এইরকম কিছু স্বার্থ দ্বারা আবর্তিত। এমনকি বাবার সাথেও প্রতিটি সন্তানের সম্পর্ক স্বার্থ কেন্দ্রিক। বাবা সন্তানকে মানুষ করেন বড় হয়ে সন্তান তার মুখ উজ্জ্বল করবে, বার্ধক্যে  তার দেখা শুনা করবে, কিংবা ভবিষ্যত বংশধর রক্ষার স্বার্থকে সামনে রেখে। তার মানে এই নয় যে বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক শুধু স্বার্থের বেড়াজালেই বন্ধী, আর আমরা বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক অনেক তুচ্ছ করে দেখব।

এই স্বার্থগুলোই বাবা এবং সন্তানের সম্পর্কের জন্ম দিয়েছিল কিংবা এই সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছিল। স্বার্থের উপস্থিতির কাছে সম্পর্ককে ছোট করে দেখার কোন যৌক্তিকতা ততক্ষণ নেই যতক্ষণ না স্বার্থের কাছে সম্পর্কের মর্যাদা কমে না যায়। স্বার্থ সম্পর্কে থাকবেই কিন্তু স্বার্থকে যখন সম্পর্কের চেয়ে বড় করে দেখা হয় তখন সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা-বোধ কমে। আর শ্রদ্ধা বোধ ছাড়া কখনও সম্পর্ক টিকে না। সুতরাং স্বার্থ সম্পর্কের জন্ম দেয় স্বার্থ সম্পর্ক ভাঙ্গে না।

 

 লেখক : এমবিএ স্টুডেন্ট, বিপিপি ইউনিভার্সিটি, লন্ডন। ইমেইল: tac_106@yahoo.com

 

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here