মেহেরুন নেছা রুমা

মেহেরুন নেছা রুমা :: একমাত্র বিয়ে নামক সম্পর্কেই কঠিন স্বার্থ জড়িত, যা অন্য কোন সম্পর্কে নাই। বিয়ের সম্পর্কেই পাত্র পাত্রী উভয়ে উভয়কে যাচাই বাছাই করে, দেনমোহর, যৌতুক নিয়ে দরদাম করে। রুপ সৌন্দর্য, সহায় সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি, যশখ্যাতি দেখে, আরও কত কি যে দেখে তার হিসেব নেই।

এতকিছু দেখাদেখির পর বিয়ে সম্পন্ন হলেও পাত্র পাত্রীর আরাম করার সুযোগ নেই। প্রতি মুহূর্ত তারা এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ যত্ন সংগ্রাম করে যায়। এই সম্পর্কের নাম আছে, দলিল আছে। তাই একে রক্ষা করার জন্য যত্ন আছে, লড়াই আছে, ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে।

অনেকসময় দেখা যায় সর্বোচ্চ ত্যাগস্বীকার করে অন্যের চাহিদা মেটানোর পরেও কখনো একটু কিছু কম হলেই একজন আরেকজনকে বলে, “তোমাকে বিয়ে করে কিছুই পেলাম না জীবনে। “কিংবা ” জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করেছি তোমাকে বিয়ে করে”।

এমনও আছে এই বিয়ে নামক সম্পর্কে চারদেয়ালের মাঝে কত বেদনা জমাট হয়ে অন্ধকারে ঘুরপাক খায়। কত দীর্ঘশ্বাস ঘরের বাতাস ভারি করে রাখে, কেউ তার খবর পায় না। তবু সামাজিক মাধ্যমে কিংবা বাইরে তাদেরকে পরিপাটি হাসিখুশি দেখলেই সমাজের মুখ রক্ষা হয়।

আবার এই সম্পর্ক ভেঙে গেলে সমাজে আর রক্ষা নেই। যেন তাদের মতো মহাপাপী আর নাই। যেন তাদের মতো খারাপ আর নাই। যেন তাদের মত অভিশপ্ত অপরাধী আর নাই।

বিয়ের সম্পর্ক ভেঙে গেলে মানুষ যতটা খারাপ ভাবে, পিতা মাতা, ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক খারাপ হলে সমাজে কেউ কিচ্ছু বলে না।

অথচ এমনও অনেক সম্পর্ক আছে যেখানে চুক্তি নেই, স্বার্থ নেই, কেনাবেচা নেই, রক্ষা করার লড়াই নেই, অভাব অভিযোগ নেই, অসম্মান অশ্রদ্ধা নেই সেসব সম্পর্ক নিয়ে সমাজের মাথাব্যথা নেই। কেননা সেসব সম্পর্কের নাম নেই, দলিল নেই, তাই দামও নেই।

বিয়ের সম্পর্ক ভেঙে গেলে মানুষ যতটা খারাপ ভাবে, পিতা মাতা, ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক খারাপ হলে সমাজে কেউ কিচ্ছু বলে না। অথচ রক্তসম্পর্কের আত্মীয়তা নষ্ট করা জঘন্য অপরাধ, মহাপাপ।

কিন্তু দেখা যায় অনেক ছেলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মাকে ভুলে যায়, তাদের খোঁজ খবর রাখে না। আপন বোনদের খবর নেয় না, ভাইয়ের মুখ দেখে না। চাচাতো মামাতো খালাতো ফুপাতো ভাই-বোনের কথা বাদই দিলাম, আপন ভাই-বোনের সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। এদেরকে নিয়ে সমাজের কারো কোন কথা নাই। এই সম্পর্কগুলো রক্ষা করার জন্য নিজেদের মধ্যে চেষ্টা নেই, যত্ন নেই। ধীরে ধীরে দূরত্ব এসে যায়, কিন্তু কেউ তা অনুভব করে না।

একজন স্বামী কিংবা স্ত্রী দীর্ঘদিন একত্রে বসবাস করলেও কখনো কোন কারণে যদি সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়, তখন একে অপরকে অসম্মান করতে, ছোট করতে বাদ রাখে না। এদেরই মুখ থেকে শোনা যায়-“ওর মত খারাপ মানুষ আর নাই। তার সাথে আমি দেখে সংসার করেছি, আমি দেখে সম্পর্ক রেখেছি অন্য কেউ হলে রাখত না। ”

অথচ একটি ছেলে যখন মা কে হাজার কষ্ট দেয় কোন খবর রাখে না। তখনও সেই মা কোনদিন বলেনা আমার ছেলেটা খারাপ। কিংবা ভাই বোনও একে অপরের কথা খারাপ বলে না।

স্বার্থহীন কিংবা রক্তসম্পর্কের এসব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলে সমাজের মানুষ জিজ্ঞাসাও করে না। এমনকি উলটা কারো কারো কাছে এরা বাহবাও পায়। বিশেষ করে অনেক মেয়ের বাবা -মা এধরনের ছেলেকে বেশি পছন্দ করে যে ছেলের ভাই-বোন নাই। থাকলেও সম্পর্ক নাই, কিংবা বাবা-মা থেকে দূরে থাকে, বা বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক নাই। এই কন্যাদের মাতা পিতা এধরনের ছেলেকে বিশেষ গুণ এবং যোগ্যতাসম্পন্ন বলে অগ্রাধিকার দেয়। তারা পড়শীর কাছে গর্ব করে বলে, “খুব ভালো পাত্র পেয়েছি মেয়ের জন্য। কোন ঝামেলা নাই সংসারে”।

মানে ভাই-বোন, বাবা-মা থাকা একটা বিরাট ঝামেলা!

 

 

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here