hijra201506পুলিশের পর এবার সমাজসেবায় নিয়োগ পাচ্ছেন হিজড়ারা। এজন্য প্রাথমিকভাবে ১৪ হিজড়ার নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। হিজড়া হিসেবে ডাক্তারি সনদ পেলেই তাদের চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় তাদের অফিস সহায়ক, দারোয়ান ও সমমানের পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ২৪ হিজড়া আবেদন করলেও চূড়ান্তভাবে ১৪ জনকে নির্বাচিত করা হয়। এদের মধ্যে দুইজন ইতোমধ্যে যোগদান করেছেন। বাকি ১২ জন ডাক্তারী সনদপত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন। চূড়ান্ত সনদ পেলে সমাজসেবা অধিদফতরের ৭টি প্রতিষ্ঠানে তারা যোগদান করবেন।

সূত্র জানায়, হিজড়াদের ডাক্তারি সনদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করে চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের অপর তিন সদস্যরা হলেন, ঢামেক গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি ইসলাম, এনাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শামীম আরা ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মমতাজ আরা। বোর্ড ইতোমধ্যেই হিজড়াদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। খুব শিগগিরই তারা চুড়ান্ত প্রতিবেদন সমাজসেবা অধিদফতরে পাঠাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিজড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক পারভীন মেহতাব গত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেনের কাছে তাদের (হিজড়া) চাকরিতে নিয়োগের বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য চিঠি দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতেই চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মমতাজ আরা মঙ্গলবার জানান, ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তারা হলেন- আনিশা ইয়াসমিন চৈতি, রাকিবুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, সিরাজ গরামি, হৃদয় ইসলাম, মুন্নী, সোহাগ, মামুনুর রশীদ, তানভীর, মোস্তফা হোসেন, আরিফ হোসেন ও আরিফুল ইসলাম। অধ্যাপক হাবিবুজ্জামান চৌধুরী জানান, গত ২৬ এপ্রিল তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাধিক ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় দলবেধে হিজড়ারা আসেন। সকলের চোখে মুখে আনন্দের অভিব্যক্তি। সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য মনোনীত হওয়ায় তারা সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বলেছে, এতদিন সমাজে অবহেলিত থাকলেও সরকার আমাদের মূল্যায়ন করেছে তাই আমরা কৃতজ্ঞ।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাধিক ডাক্তার জানান, হিজড়াদের কার লিঙ্গ (পুরুষ নাকি মহিলা) কী তা জানতে কেরোটাইপিং নামের একটি পরীক্ষা অত্যাবশ্যক। রক্তের নমুনা থেকে এ পরীক্ষা করা হয়। রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি করা হয়। প্রতিটি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এ পরীক্ষার জন্য সমাজসেবা অধিদফতর টাকা দিতে রাজি নয়। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, এ পরীক্ষার জন্য তাদের ফান্ড নেই।

এদিকে, কেরোটাইপিং পরীক্ষা ছাড়াই মেডিকেল বোর্ড চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। তাই নিশ্চিতভাবে তারা হিজড়া, তাদের কার লিঙ্গ কী তা বলা যাবেনা।

সমাজসেবা অধিদফতরের অফিস সহায়ক পারুল বেগম মঙ্গলবার বিকেলে জানান, ১২ জনের মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। অপর দুজনের পরীক্ষা চট্টগ্রাম ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে হয়। তাদের দুজনের ডাক্তারি সনদ পাওয়ায় তারা স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।

উল্লেখ্য, সরকার হিজড়াদের সংসদে আইন করে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here