সংলাপরবীন্দ্র নাথ পাল :: ২০ দলীয় জোটর ২ মাসের বেশী সময় ধরে চলা অবরোধ ও হরতালে জনজীবন যখন বিপর্যস্থ, তখন সংলাপ নিয়ে সুশীল সমাজ ও বিদেশী কুটনীতিকরা উঠে পড়ে লেগেছেন। আসলে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ও ২০দলীয় জোটের মধ্যে আলোচনা বা সংলাপ অদৌ হবে কি না,অথবা বিদেশী কুটনীতিকরা সংলাপে দুপক্ষকে বসাতে পারবেন কিনা এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের মধ্যে।

আলোচনা বা সংলাপ হয় দুপক্ষের মধ্যে। এর একটি সরকারী দল আওয়ামী লীগও ২০দলীয় জোটের অন্যতম বিএনপি। দুটি দলের নেতৃত্বেই আছেন দুজন মহিলা। সুতরাং সংলাপ হবে নাকি হবেনা এ নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২০দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল ও অবরোধে ২০দলীয় জোট প্রেট্রোল বোমা হামলা ,গাড়ীভাংচুর ,নিরিহ মানুষ হত্যা আর হরতালের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। হরতাল অবরোধে কোথাও কোনদিন সরকারের পতন ঘটেছিল বলে আমার জানা নেই।এভাবে সরকারের পতন হতে পারে বলে বিএনপি জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাও বিশ্বাস করেন কি না সন্দেহ আছে। আন্দোলনের মাঠের কি অবস্থা সেটা অবরুদ্ধ বেগম জিয়া জানবেন কি করে।

তার সাথে তো আর মাঠ কর্মীদের তেমন যোগাযোগ থাকার কথা নয়। কারন যেখানে কেন্দ্রীয় নেতারই দেখা করতে পারেন না, সেখানে মাঠের হাল হকিকত পুরোপুরি অবহিত হওয়া কিভাবে সম্ভব? তার দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা হামলা মামলায় জর্জরিত। মিছিল মিটিং নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিনে ক্লান্ত।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার পতন আন্দোলন কিভাবে সম্ভব- তা নিয়ে সুশীল সমাজ ও বিদেশী কুটনীতিকদের মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। একটি রাজনৈতিক আভাস থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন কে রেখেই সর্বদলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যেতে রাজী আছে।

কথাটা যদি সত্যি হয়,তবে ২০১৪ইং এর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ বেশ কটি গুরুত্বপুর্ন মন্ত্রনালয় বিএনপিকে দিতে চেয়েছিল। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন নয় বলে জানিয়েছিল। বিএনপি গো ধরেছিল তারা তত্বাবধায়ক ছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। শুরু হলো দেশব্যাপি তীব্র আন্দোলন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তাদের এক দাবী। এ দাবী না মানলে নির্বাচন করতে দেয়া হবেনা বলে হুংকার ছেড়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। সে আন্দোলনে প্রান গেল সাধারন মানুষের। আগুনে দগ্ধ হলো শ’খানেক মানুষ। তারপর একসময় আন্দোলন ভাটা পড়লো।

গত ২ মাসে নিজদলের হাজার হাজার কর্মী জেলে, আগুনে দগ্ধ সহ মারা গেল শতাধিক। হাজার হাজার গাড়ী ভাংচুর করা হলো।লাখো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলো। সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ হরতাল অবরোধে অবর্ননীয় দু:খ কষ্টে ভুগলো। আর এখন যদি সেই হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে হয়,তাহলে আগে কেন গেলেন না, একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে এর জবাব আমি চাইতেই পারি।

বিএনপি যদি মনে করে বিদেশীরা তাদের ক্ষমতায় বসাবে, তাহলে তো ২০১৪এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হবার কথা নয়। আর সোয়া বছর নির্বিঘ্নে পার পাবার কথা নয়। যাইহোক আপাতত: আগাম নির্বাচন ও সংলাপ হচ্ছে না,এটা নিশ্চিত। রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের যে কথা ভাবা হচ্ছে ,এটাও সম্ভব হবে না। আওয়ামীলীগের প্রথম সারীর নেতারা ও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আগাম নির্বাচনের সম্বাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।

এর আগে আমেরিকার রাষ্ট্রদুত মজিনা ২০১৪ এর নির্বাচন ঠেকাতে কম চেষ্টা করেননি। আর এ কারনেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ী স্বাক্ষাৎ পর্যন্ত পাননি। তবে একটি কথা সত্য একবার যদি বিদেশীরা নির্বাচনে নাক গলাবার সুযোগ পান,তবে বাংলাদেশ আফগান,ইরাক ও লিবিয়া হতে দেরী লাগবে না এটা বিলক্ষন বুঝেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের মানুষ এটা জানে,এদেশে জঙ্গীবাদ কায়েম হলে কি পরিমান হেনস্থা হতে হবে। জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই। তা না হলে ইসলামের জিকির তুলে মসজিদে বোমা হামলা ও মুসুলমানদের বোমা মেরে,আগুনে পুঁড়িয়ে হত্যা তারা দেখতে চায়না। আর এদের সাথে আপোষ করে আগাম নির্বাচন হলে জঙ্গীরাই আস্কারা পাবে। এর পরিনাম কোনদিন ভাল হবে না।

সুতরাং সংলাপ সংলাপ বলে যারা মাথা কুটছেন,তারা একথাটা জেনে রাখুন বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা এক নন। বঙ্গবন্ধুর বিশাল হৃদয়ের কোন মুল্য দেয়নি তার খুনীরা এবং তাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় আসেন তারাও। এথেকে যা শিক্ষা নেবার তা নিয়ে নিয়েছেন,তার কন্যা শেখ হাসিনা!

১০/৩/১৫

লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল”০১৭১৩-৮১৯২৯৪

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here