আল-আমিন গ্রুপমুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: আল-আমিন গ্রুপের ব্যবস্থপনা কর্তৃপক্ষ কর্র্তৃক ত্রি-পক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সিদ্ধান্ত যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন না করার প্রেক্ষিতে প্রতিকার চেয়ে উপ-মহাপরিদর্শক, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, কুমিল্লা বরাবরে আবেদন করেন অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদ ।

সোমবার দুপুরে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদ এর কার্যালয় সূত্রে এ খবর নিশ্চিত করেন।

অস্থয়ী কর্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, ১০ সেপ্টেবর’১৫ তে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দফায় দফায় বৈঠক করেও আল-আমিন গ্রুপের ব্যবস্থপনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় নি। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যাহা হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রিয় মহোদয়, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ গভীর ক্ষোভ, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সঙ্গে আপনার সদয় জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে জানাচ্ছি যে; আল-আমিন গ্রুপের অধিকার বঞ্চিত ও নির্যাতিত সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে অত্র সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের অবর্নণীয় দুঃখ-কষ্ট-বঞ্চনার ইতিবৃত্তসহ একটি স্মারক পত্র ( সূত্র: প- ০২/২০১৫, তারিখ ১২/৮/১৫) আপনার বরাবরের প্রেরণ করা হয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে আপনার উদ্যোগ ও আহবানে ১০/০৯/১৫ তারিখে আপনার দপ্তরে একটি ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত ছিল নিম্নরূপ: (১) ঈদুল আযহার আগে সকল পাওনাদি হিসাব করে এতদ্‌বিষয়ক একটি তালিকা কারখানার নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করতঃ এর একটি কপি আপনার দপ্তরে প্রেরণ করতে হবে।(২) ঈদুল আযহার আগে পাওনাদির ৫০% পরিশোধ করতে হবে। (৩) ৩১/১২/২০১৫ এর মধ্যে পাওনাদির অবশিষ্ট ৫০% পরিশোধ করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, মধ্যস্ততাকারী হিসেবে আপনার দপ্তরের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২০০৬ এর ১২৪ (ক) ধারার’ বিধান মোতাবেক শ্রমিকদের পাওনাদি-পরিশোধের ব্যাপারে আইনের বাধ্যবাধকতা স্মরণ পূর্বক সতর্ক করা হয় যে, আইন অমাণ্যে বিধি-বিধানের আলোকে আইনী ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে ( আপনার দপ্তরে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট নথিতে যাহা আছে)। এরূপ অবস্থয় ঈদুল আযহা যখন আসন্ন-আমরা লক্ষ্য করলাম আল-আমিন কর্তৃপক্ষ উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোন প্রক্রিয়া শুরু করছেননা; তদ্‌প্রেক্ষিতে অত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে কারখানা গেইটে অবস্থন ধর্মঘটের কর্মসূচী গ্রহণ করা হলে- তখন মালিক পক্ষ আবার নড়ে-চড়ে বসে এবং  উল্লেখিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আমাদের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক করে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের বিষয়ে সময় বর্ধিত করে ঐক্যমতের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। যাহার ছায়াকপি এখানে সংযুক্ত আছে।

কিন্ত আমরা আল-আমিন গ্রুপের শতশত কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকগণ অবাক- বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে, আল-আমিন কর্তৃপক্ষ পর পর- দু’টি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দু’টি সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও স্মারক পত্রের মর্মবস্থ যথাযথভাবে ও পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন না করে একের পর এক বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১২৪ (ক) ধারার লংঘন/ ব্যত্যয় ঘটিয়ে আমাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষনীয় যে, আমরা যতবেশী ধৈর্য-সহনশীল, আইনেরপ্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সমঝোতার মানসিকতা পোষন করছি- বিপরীত দিক থেকে আল আমিন কর্তৃপক্ষ ততোধীক আইন ও কর্তৃত্ববহির্ভূত রুঢ় এবং নিষ্ঠুর আচরনের মাধ্যমে আমাদেরকে ক্রমাগত অন্ধকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিগে ঠেলে দিচ্ছে।

নিম্নে সমঝোতা ভঙ্গ/লংঘন/ব্যত্যয়ের কতিপয় চিত্র তুলে ধরা হলো; ১। সকল শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্ত্তুত পূর্বক নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করা হয়নি। সঙ্গত কারণে যাহার কপি আপনার দপ্তরকেও সরবরাহ করা হয়নি। ২। সকল শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ২৫/১০/১৫ এর মধ্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও ইহা পূর্ণাঙ্গরূপে এবং যথার্থভাবে, কার্যকর করা হয়নি। ৩। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা ও পছন্দের আলোকে কেবলমাত্র বকেয়া বেতনের (হাজিরা দেখে) ৩০% প্রদান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ছিল- যাদের বকেয়া আছে তাদের প্রত্যেককে বকেয়া বেতন-ভাতার ৫০% ১ম কিস্তিতে পরিশোধ করার। এখানে যাহার লংঘন হয়েছে। ৪। কর্মকর্তা, সুপারভাইজার, পিয়ন, সিকিউরিটিগার্ডের কোন তালিকা করা হয়নি এবং payment দেয়া হচ্ছেনা। ৫।  বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অত্র স্মারক পত্রের ১ নং স্বাক্ষরকারীর ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা অনিয়মিত তথা বকেয়া থাকার পরও  ১ ও ২ নং স্বাক্ষরকারীকেও কোনরূপ payment করা হচ্ছেনা।

মহোদয়; আল-আমিন কর্তৃপক্ষের একের পর এক সিদ্ধান্ত ভঙ্গ, নানান ছলচাতুরী, টালবাহানা, কুটকৌশল ও সামগ্রীক কর্মকান্ডে ধীরগতিতে প্রতীয়মান হয় যে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির চূড়ান্ত মিমাংসা তথা (বকেয়া বেতন-ভাতার শতভাগ পরিশোধ, কাজে যোগদান কিংবা আইনসম্মতভাবে সকল ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে অব্যহতি প্রদান ইত্যাদিসহ) নিষ্পত্তির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এরূপ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আল-আমিন গ্রুপের শতশত শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তার বর্তমান সিমাহীন দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবন-যাপন এবং অনাগত দিনের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে আমরা যুগপথভাবে নিয়মতান্তিক পন্থায় কঠোর ও জানবাজি আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি এবং  সাথে সাথে মহোদয়ের উপর অর্পিত শ্রম আইনের বাধ্যবাধকতা ও ইতিপূর্বেকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার আলোকে বিপন্ন মানবিকতা রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার আইনী প্রতিকার প্রত্যাশা করছি।

অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদ আহবায়ক ও সহ-ব্যবস্থপক (জনসংযোগ), এ.বি.বি.এল, আনম জাহের উদ্দিন বলেন, আল-আমিন কর্তৃপক্ষের একের পর এক সিদ্ধান্ত ভঙ্গ, নানান ছলচাতুরী, টালবাহানা, কুটকৌশল ও সামগ্রীক কর্মকান্ডে দেখে মনে হচ্ছে কাজে যোগদান কিংবা আইনসম্মতভাবে সকল ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে অব্যহতি প্রদান ইত্যাদিসহ নিষ্পত্তির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদ যুগ্ম-আহবায়ক ও সিঃ কর্মকর্তা (বিতরণ) এ.বি.বি.এল, আশিকুর রহমান বলেন, আমরা যতবেশী ধৈর্য-সহনশীল, আইনেরপ্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সমঝোতার মানসিকতা পোষন করছি- বিপরীত দিক থেকে আল আমিন কর্তৃপক্ষ ততোধীক আইন ও কর্তৃত্ববহির্ভূত রুঢ় এবং নিষ্ঠুর আচরনের মাধ্যমে আমাদেরকে ক্রমাগত অন্ধকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিগে ঠেলে দিচ্ছে।

অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারি সংগ্রাম পরিষদ যুগ্ম-আহবায়ক ও সিঃ বিঃ টিঃ (উৎপাদন), এ.বি.বি.এল জন্টু মিয়া, আমাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।

এ ব্যাপারে জানতে আল আমিন গ্রুপের ব্যবস্থপনা পরিচালকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় । এছাড়াও ল্যান্ডফোনে চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হই।

উল্লেখ যে এর অনুলিপি, সচিব, শ্রম মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা। মহাপরিচালক, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ। জেলা প্রশাসক, নোয়াখালীবরাবরে পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here