ডেস্ক রিপোর্ট:: গৃহশ্রমিকদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, সচেতনতা বৃদ্ধি, আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থণ ও গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালাকে আইনে পরিনত করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স “সুনীতি প্রকল্প” এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত “গৃহশ্রমিকের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ এবং নির্যাতন প্রতিরোধ বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে আজ ২৫ নভেম্বর ২০২০ (বুধবার) বক্তারা এ আহ্বান জানান।

বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান শিরীন আখতার, এমপির সভাপতিত্বে এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন এর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ মুজিবুল হক, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, এমপি, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিলস্ মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিলস্ যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ প্রতিনিধি শাকিল আখতার চৌধুরী, সুনীতি প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও অভিনেত্রী দীপা খন্দকার, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী, আইন ও শালিস কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ-লইয়ার অ্যাডভোকেট আসমা খানম, হ্যালোটাস্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান লিখন, ব্র্যাকের টিভিইটি সাপোর্ট এন্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার কনক লতা, লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ মুজিবুল হক, এমপি বলেন, গৃহশ্রমিকদের একটি বড় অংশ শিশু। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শিশুদের কোন ধরনের শ্রমে নিযুক্ত করা যাবে না। যারা শিশুদের গৃহশ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেন তাদের ভাবতে হবে এটা ঠিক করছেন কিনা? তিনি বলেন গৃহশ্রমিকদের জন্য একটি নীতিমালা ২০১৫ সালে প্রণয়ন করা হলেও তারা এখনও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, এমপি বলেন, গৃহশ্রমিকরাও আমাদের মতই মানুষ কিন্তু তাদের সাথে অমানবিক অচরন করা হচ্ছে। তিনি বলেন গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গৃহশ্রমিকরা প্রতিনিয়ত আমাদের সহযোগিতা করেন বলেই আমরা যারা বাইরে কাজ করি তা ঠিক মত করতে পারছি। তারপরও তারা অবহেলিত, নির্যাতিত। নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি জোর দাবি জানান। তিনি বলেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মত গৃহশ্রমিকদেরও নিয়োগপত্র, নির্দিষ্ট কমঘন্টা এবং নির্দিষ্ট মজুরি থাকা দরকার।

বিল্স যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন গৃহশ্রমিকদের অধিকারের সাথে সাথে তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়েও সকলকে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, জিডিপিতে তাদের যে অবদান তার তুলনায় তারা মর্যাদা পায় না।

গৃহশ্রমিকরা আমাদের পরিবার ও সমাজেরই অংশ হিসেবে আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে উল্লেখ করে স্কপ প্রতিনিধি শাকিল আখতার চৌধুরী বলেন কোভিড-১৯ সেটা আরো ভালো করে দেখিয়ে দিয়েছে। গৃহশ্রমিক হয়রানি বন্ধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবি জানান তিনি।

কোভিড-১৯ সময়ে গৃহশ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন গৃহশ্রমিকদের উপর নির্যাতন হচ্ছে কিন্তু এর বিচার হচ্ছে না। গৃহশ্রমিকদের শিশু সন্তানদের রাখার জন্য সরকারি খরচে সারাদেশে ডে কেয়ার সেন্টার চালু করার দাবি জানান তিনি।

সুনীতি প্রকল্পের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও অভিনেত্রী দীপা খন্দকার বলেন, গৃহশ্রমিকদের উপর নির্যাতনের সব খবর আমরা পাচ্ছি না। অনেক বাসায় তাদের জন্য কাজের এবং থাকার পরিবেশ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন তারপরও বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে তাদের সেখানে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গৃহশ্রমিকদের অধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে সকলকে সচেতনতার পাশাপাশি বেশি করে প্রচারণা চালাতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে বিলস্ মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, গৃহশ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। যারা আমাদের জন্য কাজ করে, কষ্ট করে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পারছি না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here