ইউনাইটেড নিউজডেক্স
শ্যামপুরের ডাইং শিল্পের তরল বর্জ্য রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামপুর অংশের পানিতে মিশে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত করছে। একটি দুটি নয়, এ শিল্প এলাকার প্রায় দুই শ কারখানার তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। এসব কারখানার বেশির ভাগের বর্জ্য শোধনাগার নেই। এ দূষণে শ্যামপুরের পানিতে উচ্চ মাত্রার তেল, গ্রিজ, ফেনল ও অ্যামোনিয়া পাওয়া গেছে।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামপুরের দোলেশ্বর ঘাটে ‘শ্যামপুরের ডাইং ইন্ডাস্ট্রি এবং নদীদূষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে এইসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। সঞ্চালনা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল।
এক্সপ্লোরেটোরি স্ট্যাটিস্টিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করে এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গায় পানির অম্লত্বের (পিএইচ) মান বর্ষার আগে-পরে থাকে ৭ দশমিক ৬ থেকে ৮ দশমিক ৫, যা ক্ষারীয়ধর্মী। ডাইং শিল্পের তরল বর্জ্যের কারণে নদীর পানির পিএইচ এমন।।শ্যামপুরের পানিতে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি, কিন্তু পরিমাণ খুবই কম। এ ছাড়া শ্যামপুরের পানিতে উচ্চ মাত্রার ফেনল, তেল ও গ্রিজের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া পানিতে আছে, যা নদীর স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
গবেষণায় আরো দেখানো হয়েছে, শ্যামপুরের পানিতে অ্যামোনিয়া ২ থেকে ৪ দশমিক ৮ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যার আদর্শমান শূন্য দশমিক ৫। তিনটি ভিন্ন ঋতুতে শ্যামপুরের পানিতে তেল ও গ্রিজের পরিমাণ ১ দশমিক ৯ থেকে ৫ দশমিক ৬ পর্যন্ত। অথচ এটি শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থাকার কথা। এসব তেল ও গ্রিজ নদীর পানিকে আলো প্রবেশে বাধা দেয়। নদীর পানিতে ফেনল পাওয়া গেছে শূন্য দশমিক ১৪ থেকে শূন্য দশমিক ২, যার আদর্শমান শূন্য দশমিক ০০২। এই অতিরিক্ত মাত্রার ফেনল পানিকে আরও বিষাক্ত এবং পানের অনুপযোগী করছে। ফেনলের উপস্থিতি ডায়েরিয়া, লিভারে স্থায়ী সমস্যার জন্য দায়ী।
বক্তারা দাবি করেন, শিল্প এলাকা শ্যামপুরে কারখানার সংখ্যা প্রায় দুই শ। এর মধ্যে রিরোলিং মিল, ইস্পাত ও তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানা আছে। তবে ডাইং কারখানা আছে প্রায় এক শ। শ্যামপুর–কদমতলী শিল্প মালিক সমিতি জানিয়েছে, এর মধ্যে দশ থেকে ১৫টি কারখানার বর্জ্য শোধনাগার ব্যবস্থা আছে। বাকি কারখানাগুলোর তরল বর্জ্য সরাসরি নালা হয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বক্তারা।