শিপুফরাজী, ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি :: হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশার পাশাপাশি শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকায় শীতে কাঁপছে ভোলায় লক্ষাধিক মানুষ। প্রচন্ড শীতের কারনে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, কোল্ড এলার্জি ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সদর হাসপাতালে শিশু রোগীদের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় শিশুদের নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেনা বলেও অভিযোগ তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলায় জেঁকে বসেছে শীত, এতে বেড়েছে শীতজনিত নানা অসুখ-বিসুখ। আর এতে বেশিরভাগ শিশু আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ ডিসেম্বর সুমাইয়া নামে একটি শিশু ব্রেন ইনফেকশনে ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ ডিসেম্বর ঈমান হোসেন নামে অপর একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৪০ শিশু। এখনও হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে ১১টি শিশু।
আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ১১ ডিসেম্বর ১৩ জন রোগীর মধ্যে তিনজন, ১২ ডিসেম্বর ১০ জনের মধ্যে একজন, ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনের মধ্যে একজন, ১৪ ডিসেম্বর ১৪ জনের মধ্যে দুইজন, ১৫ ডিসেম্বর ২০ জনের মধ্যে তিনজন, ১৬ ডিসেম্বর নয়জন ও ১৯ ডিসেম্বর আটজনের মধ্যে এক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনরা জানালেন, শিশু রোগীদের চাপ বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে শিশুদের নিয়ে তারা একদিকে যেমন আতঙ্কিত অন্যদিকে চিকিৎসক নার্স-সংকট থাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিয়েও চিন্তিত তারা।
ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত স্টাফ নার্স রিনা সরকার বলেন, শিশু রোগীদের চাপ একটু বেশি। তারপরেও আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। নার্স কম থাকায় একটু সমস্যা হলেও সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি আমরা।
সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে সেখানে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু হাসপাতালে শিশুদের জন্য মাত্র ১০টি শয্যা থাকায় গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের। পৌর কাঁঠালী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুর মা নুপুর বেগম বলেন, শীত বাড়ায় শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। শিশুকে নিয়ে দুইদিন ধরে ভোলা সদর হাসপাতালে রয়েছি।
লালমোহন থেকে আসা রোগী মো ছিদ্দিক বলেন, শাষকষ্টে আক্রান্ত হওয়ায় শিশুকে লালমোহন হাসপাতালে ভর্তি করাই। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা ভোলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ১৩ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর চিকিৎসকরা জানিয়েছে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। কিন্তু চার দিনেও শিশুর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
লালমোহনের এক শিশুর মা সাহানুর বলেন, শিশুদের নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি, তিনদিনেও শিশু সুস’ হয়নি। ভোলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ড কুমার বিশ্বজিৎ পাল দু’টি শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা ফরিদ আহম্মেদ শীতজনিত রোগে দুই শিশুর মৃত্যু নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর চাপ খুব বেশি নেই। অভিভাবকগণ সচেতন থাকায় শিশুরা আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি করাচ্ছেন। ওই সব শিশুদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে যেভাবে শীত বাড়ছে তাতে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব আরো বেড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে যে কয়জন শিশু রোগী রয়েছে তারা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেনসহ চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ রয়েছে।
সিভিল সার্জন আরো বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, খুব শিগ্রই চিকিৎসক দেওয়া হতে পারে বলে আশা করছি।