স্টাফ রিপোর্টার :: করোনার ছুটিতে বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী ২৮ মার্চ শনিবার থেকে ক্লাস সম্প্রচার করা হবে সংসদ টিভির মাধ্যমে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস হবে।

মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বৈঠকে অংশ নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদসহ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সেরা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আগামী তিন মাসের পরিকল্পনা নিয়ে তারা এই কাজটির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও বিকল্প উপায়ে ক্লাস নেওয়ার আলোচনা চলছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। গত ১৬ মার্চের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ থাকার কথা ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। করোনার বিস্তার ঘটায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময় বাড়িয়েছে।

বন্ধের এই সময়ে শিক্ষার্থীদের নিজ বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনেকটা ঘরবন্দি অবস্থায় আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী পৌনে দুই কোটির মতো আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী এক কোটির ওপরে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্যদিকে কোচিং বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়ছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক জানান, সরকারের এ টু আই প্রকল্পের সঙ্গে মিলে এ কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের ক্লাস রেকর্ডিং করে সংসদ টিভির মাধ্যমে এই ক্লাস প্রচার করা হবে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যবর্তী সময়ে এই ক্লাসগুলো প্রচার করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একেকটি বিষয়ের জন্য মোট ৩৫টি ক্লাস থাকবে।

মাউশির সূত্রে জানা গেছে, এসব ক্লাস রেকর্ডিং করা শুরু হয়েছে। তিনটি স্টুডিওতে এই ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি স্টুডিও সরকারের শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর। এ ছাড়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং মোবাইল ফোন অপারেটর রবির স্টুডিওতেও এসব ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাইমারি স্কুলে বিকল্প উপায়ে কীভাবে ক্লাস বা পড়াশোনা চালু রাখা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তাভাবনা করছেন। টিভির মাধ্যমে ক্লাস প্রচারের বিষয়টিও তাদের ভাবনায় আছে।

ছুটিতে বাড়িতে থাকা অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য এসএমএস (খুদেবার্তা) পাঠাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গতকাল অধিদপ্তরকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।

মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশের এক কোটি ৩৭ লাখ শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইলে একটি ইউনিক এসএমএস পাঠানো হবে। এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যা পড়ানো হয়েছে, যা পড়ানোর কথা ছিল, বন্ধের মধ্যে মায়েদের তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীদের সেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বলা হবে। এই এসএমএসটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সচিব জানান, নিয়মিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা মোবাইলে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মনিটর করবেন।

এভাবে ক্লাস চালু রাখার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে অন্তত বাড়িতে বসে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে।’

এদিকে, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here