কলাপাড়া : কলাপাড়ায় মৃত ব্যক্তির নামে তিন লাখ টাকা সিসি লোন উঠিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও একশ্রেনীর দালালের যোগসাজসে সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া শাখায় এ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগে অনুসন্ধানে জানাযায়, সুইডেন প্রবাসী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মারা গেছেন ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি। অথচ তার নাম এবং সই দেখিয়ে তিন লাখ টাকার একটি সিসি লোন করা হয়েছে ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর( যার নম্বর-১৪)। হঠাৎ করে ওই লোন অনাদায়ের জন্য বন্ধকী দেয়া জমির নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় তার স্বজন কামরুল ইসলাম তরুন গাজী ব্যাংকে যোগাযোগ করে হতবাক হয়ে পড়েন। বর্তমানে সুদসহ মোট অনাদায়ী টাকার পরিমাণ চার লাখ ৬৫ হাজার ৬৭০ টাকা। মেসার্স মিলন ট্রেডার্স এর প্রোপাইটার মৃত জাহাঙ্গীর আলমকে দেখিয়ে এ লোন কেস সৃজন করেন তৎকালীন ম্যানেজার আবু ইউসুফ হাওলাদার। সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া বন্দর শাখার এমন জালিয়াতির ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলমের স্বজনরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোন ফরমগুলোর কোন কিছুই ফিলাপ করা নেই। শুধু জাহাঙ্গীর নামটি লেখা রয়েছে। তাও দেখলে মনে হয় কোনমতে স্বাক্ষরজ্ঞান জানা মানুষের সই। কোন জামিনদারের নাম কিংবা সই নেই। কোন ব্যাংক কর্মকর্তার সইও নেই ওই সকল কাগজে। এমনকি এ লোন ফাইলের বন্ধকী সম্পত্তির কোন মূল দলিল নেই। সই মোহর দলিল রাখা হয়েছে, যার নম্বর-৩০৮৯/২০০। শুধুমাত্র ম্যানেজার আবু ইউসুফ এসব জালিয়াতি করে সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

এই কর্মকর্তা কলাপাড়া শাখায় ২০০৯ সালের পহেলা এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। একইভাবে মেসার্স সালিহা স্টোর্সের নামে একটি সিসি লোন দেয়া আছে, যার নম্বর-৩৩। এখানে বন্ধকী সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। যে জমি লোনগ্রহিতার দখলে নয়। শুধু সিসি লোন নয়। ২০ হাজার টাকার ক্ষুদ্র লোন রয়েছে ১৩০টি। যেখানে অনাদায়ী প্রায় ১৪ লাখ। এসব গ্রাহকদের অর্ধেকের কোন অস্তিত্ব নেই। এছাড়া কৃষি লোন বিতরনেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। শত শত লোন গ্রহিতার কোন অস্তিত্বও নেই। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি চক্রের যোগসাজশে ভুয়া নাম ঠিকানার কাগজপত্র ব্যবহার করে বেনামী লোন নিজেরা হাতিয়ে নিয়েছে।

জানা গেছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দরিয়াপুর গ্রামের আব্দুর রহমান মোল্লার নামে ( আউশ কেস-১০/২০০১, তারিখ-২৫.০৪.২০০১) এবং সোবাহান মোল্লার নামে (আউশ-১১/২০০০-২০০১, তারিখ-২৬.০৪.২০০১) পাঁচ হাজার টাকা করে কৃষিলোন অনাদায়ী রয়েছে। অথচ ওই গ্রামে এই নামে কোন লোক নেই বলে সেখানকার গ্রামবাসী এবং মেম্বাররা জানিয়েছেন। এমনকি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও অনাদায়ী লোন আদায় করতে গিয়ে এদের কারও ঠিকানা খুঁজে পায় নি। অন্তত তিন শ’ বেনামী কৃষিলোন রয়েছে শুধুমাত্র নীলগঞ্জ ইউনিয়নে।

এভাবে সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া বন্দর শাখায় বেনামী লোনগ্রহীতার মধ্য দিয়ে অন্তত কোটি টাকা ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ র্কর্মীরা চিহ্নিত একটি দালালচক্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকটিতে সবসময় নীলগঞ্জ ইউনিয়নসহ এলাকার ১০/১২ জন চিহ্নিত দালালকে বসে থাকতে দেখা যায়। লিয়াকত হোসেন নামের একজন শিক্ষক জানালেন, তার নামে ৩০ হাজার টাকার একটি ভুয়া লোন দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়েছেন।

মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, এভাবে সোনালী ব্যাংকের চিহ্নিত কর্মকর্তারা একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে আরও ১০/১২ জন শিক্ষকের নামে ভুয়া লোন দেখিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এসব কারণে ব্যাংকের প্রকৃত গ্রাহকরা শঙ্কায় পড়েছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আবু ইউসুফ হাওলাদার জানান, তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী নন। বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। পরে কথা বলবেন বলে জানান ।

বর্তমানে কর্মরত শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইবাদুর রহমান জানান, এসব সমস্যা নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। এর বাইরে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক খান জানান, নির্দিষ্ট কিছু দালালরা সাধারণ মানুষের ছবি এবং দলিলের ফটোকপি দিয়ে লোন কেস তৈরি করে তাদের অজান্তেই সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে সাধারণ কৃষকের নামে খেলাপীর দায়ে মামলা করা হয়।

তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন জানায়, সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট দালাল গণি শরীফসহ আরও ১০/১২ দালাল ব্যাংকের একটি চক্রের যোগ সাজশে কৃষকের অজান্তেই তাদের ছবি, দলিলের ফটোকপি সংগ্রহ করে সই জাল করে শত শত লোনকেস সৃজন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বর্তমানে এনিয়ে নীরিহ কৃষকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হয়েছে মামলা আতঙ্ক। মানুষের দাবি তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। বড় ধরনের জালিয়াতির তথ্য বের হয়ে আসবে।

মিলন কর্মকার রাজু/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here