জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্তৃক কর্মচারীদের নির্যাতনের অভিযোগজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের মারধর ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুক্রবার সাংবাদকিদের কাছে গৃহপরিচালিকা (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) জাহানারা বেগম ও দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার আবদুল কাদের এ অভিযোগ করেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর শারমিন জাহান লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর থেকে অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কারনে অকারনে খারাপ ব্যবহার করে আসছেন। তিনি কথায় কথায় অধিনস্ত কর্মচারীদেরকে মারধর ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালান। অভিযোগ রয়েছে, শারমিন জাহানের অসদাচরণ ও মারধরের ভয়ে কয়েকজন কর্মচারী জেলা পরিষদ ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়ে নিজেদের আত্মসম্মান রক্ষা করেন।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী জাহানারা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি প্রায় ২বছর ধরে মাস্টাররুলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর বাসভবনে গৃহপরিচালিকার কাজ করে আসছি। আগে কোন স্যার আমার সাথে খারাপ আচরণ করেননি। কিন্তু শারমিন জাহান ম্যাডাম আসার পর থেকেই কাজে ভুল হওয়ার অভিযোগ তুলে আমার সাথে প্রতিদিন খারাপ ব্যবহার করে আসছেন। ১০-১২ দিন আগে প্রতিদিনের মত সকালে শারমিন জাহান ম্যাডামের বাসায় কাজ করতে যাই। রুটি ও আলু ভাজি বেশী তৈরী করায় তিনি আমাকে লাথি-ঘুষি মেরে চুল টেনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।

কান্নাকাটি করে তখন আমি উনার হাত থেকে রক্ষা পায়। পরে আমি জেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এর পরদিন সকালে আবার কাজ করতে গেলে শারমিন জাহান ম্যাডাম দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে তার কাপড়ে মাড় দিতে বলেন। মাড় দেয়ার সময় তার কাপড়ে রঙ উঠে গেছে এমন অজুহাতে তিনি প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে আমাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে আমার ঘাঁড় ধরে লাথি-ঘুষি দিয়ে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দেন। এ সময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দও করেন। জাহানারা বেগম তার উপর নির্যাতন-নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

জেলা পরিষদের দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার আবদুল কাদের বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন জাহান স্যার জেলা পরিষদে যোগদানের পর প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে একদিন উনার শাড়ি আয়রন করে দিয়েছি। পরে ব্লাউজ আয়রন করে আমি ভাঁজ করি। এতে কিছু না বলেই তিনি পেছন থেকে আমাকে থাপ্পড় দেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্লাউজ কেন ভাঁজ করেছি। এছাড়া খারাপ ভাষায় আমাকে গালাগাল করেন। এরপরও কয়েকবার তিনি আমার গায়ে হাত তুলেছেন। শুরু থেকেই তিনি আমার সঙ্গে কারনে অকারনে খারাপ ব্যবহার করেছেন। কাদের বলেন, শুধু আমি নই, জেলা পরিষদের কোন কর্মচারী ম্যাডামের মারধর এবং গালমন্দ থেকে রেহাই পায়নি। তবে চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চায়না বলে আবদুল কাদের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন জাহান বলেন, শৃঙ্খলার স্বার্থে কাউকে দু-একটা চড়-থাপ্পড় দিলে তাকে মারধর বলেনা। মারধর সেটাকে বলে কাউকে মারধর করলে সে হাসপাতালে ৮-১০দিন ভর্তি থাকলে তাকে মারধর বলে। তবে পরে আবার কর্মচারিদের মারধরের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। সবকিছু আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, জাহানারাসহ দু’জন কর্মচারী তাদেরকে প্রধান নির্বাহী কর্তৃক মারধরের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি সঠিক বিচার করবো বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি। এ ঘটনাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করবো। এ ধরণের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদে আর কখনো না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here