শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলা পাল্টা হামলায় ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।  বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে। এসময় আবাসিক হলে শিবির নিয়ন্ত্রিত রুমগুলোতে ব্যাপক ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোহিতায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এদিকে নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও লুটপাটের ঘটনার ক্ষতিপুরণের দাবীতে ক্যাম্পাসে লাগাতার ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে শাখা শিবির। উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৃহস্পতিবারের সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এদিকে সিন্ডিকেটে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ। এ রকম ঘটনায় কোন তদন্ত কমিটি না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক নজীর বিহীন ঘটনার জন্ম হয়েছে বলে তারা মনে করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী  ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে,পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী বুধবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমের গ্রেফতারে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল শেষে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাম দা,পাইপ,হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শাহপরান হলে শিবির নিয়ন্ত্রিত রমগুলোতে হামলা চালায়। এসময় হলের এ-ব্লকের ২০১,২০২সহ ১৫টি রুমে ব্যাপক ভাংচুর করে। এসময় শাখা শিবিরের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করে। অতর্কিত হামলায় শিবিরের সভাপতি আ.জ.ম মোজাহিদ রুমীসহ ১০ জন মারাত্নক আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা ২য় ছাত্র হলে একই কায়দায় হামলা ও ভাংচুর চালায়।

পরে শিবিরের নেতাকর্মীরা শাহপরান হলের আবাসিক এলাকায় অবস্থান নেয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় শিবিরের তাড়ায় ক্যাম্পাসের গোল চত্ত্বরে এসে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক ধাঙ্গা পুলিশ,র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। ছাত্রলীগের শুভজিত,মোস্তফাসহ শিবিরের আরো ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিক অবস্থায় ওসমানী মেডিকেলসহ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

ছাত্রলীগের লুটপাট ও হল দখল:

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহর ছাত্রলীগের বিধান গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপের যৌথ হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে শিবির। এসময় ছাত্রলীগ প্রীতি পুলিশ ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় তারা শিবিরের উপর চড়া হয়। এতে ছাত্রলীগের পাল্টা হামলায় ছন্ন ছাড়া হয় শিবির কর্মীরা। এসময় শাহপরান হল ও ২য় ছাত্র হলে শিবির নিয়ন্ত্রিত রুমগুলোতে আসবাবপত্র ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় রুমে থাকা কম্পিউটার,ল্যাবটপ ও নগদ অর্থ লুটপাট করে হল দখল করে নেয়। পরে নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালযের প্রধান ফটকের এডু পার্ক দোকানে ভাংচুর করে।

শিক্ষকদের ইন্ধনের অভিযোগ:

এদিকে সূত্র জানিয়েছে,উপাচার্যকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলার ঘটনায় স্বয়ং আওয়ামী-বাম পন্থি শিক্ষকদের ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে। শিবিরের উপর হামলা চালানোর জন্য কয়েক দফা বৈঠকে তারা এ নির্দেশ দেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার দাস,রসাযন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: ইউনুস,সাবেক প্রক্টর ড. সাইফুল ইসলাম সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফারুক উদ্দিন হামলার জন্য ছাত্রলীগকে উসকানি দেন। তবে বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: সালেহ উদ্দিন বিষয়টি সমঝোতা করার চেষ্টা করলেও উক্ত শিক্ষকরা পুলিশ নিয়ে হলে হামলা চালানোর জন্য ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেন।

নেতাদের বক্তব্য:

ঘটনার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আহত শাখা শিবিরের সভাপতি আ.জ.ম মোজাহিদ রুমী বলেন, আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের ৩০ জন নেতাকর্মীদের আহত করেছে। ছাত্রলীগের এ হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবীতে শিবির বৃহস্পতিবার থেকে ক্যাম্পাসে লাঘাতার ধর্মঘট পালন করবে বলে তিনি জানান।

তবে ঘটনার জন্য শিবিরকে দায়ী করলেন শাখার আহবায়ক শামছুজ্জামান চৌধুরী সুমন।

এ ব্যাপারে দু:খ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালযের প্রক্টর ড. হিমাদ্রী শেখর রায় ঘটনায় জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হবে বলে জানান।

এদিকে উক্ত ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখার জাতীয ছাত্রদল। বুধবার এক যৌথ বিবৃতে ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচার ও ক্ষতিপুরণের দাবী জানিয়েছে শাখার নেতৃবৃন্দ।

আতিক মাহবুব/শাবিপ্রবি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here