ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম
আলমগীর মিয়া
৪ ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধের বীর সেনানী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব’র ৪০ তম শাহাদৎ বরণ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নবীগঞ্জ শহর মুক্ত করতে পাকহানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যোদ্ধে শহীদ হন এই বীর সেনানী। স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও এই বীর শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কিংবা তার শাহাদৎ বাষির্কী পালন করা হয়নি। অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই বীর সেনানীর স্মৃতি সমাধী টুকুও।সেদিন ছিল ডিসেম্বর মাসের ৪ তারীখ। সারাদেশের মত নবীগঞ্জেও পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধে চোরা গুপ্তা হামলায় দিশেহারা অবস্থায় নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গনে বাংকার তৈরী করে রাজাকারদের সহায়তায় পাক বাহিনী শক্ত অবস্থান তৈরী করে। বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে ধংসযজ্ঞ চালায়। এমনি অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধে অসম সাহসী বীর সৈনিক রশীদ ও তার বাহিনী নবীগঞ্জ প্রাঙ্গনে অবস্থিত পাক হানাদারদের ক্যাম্পে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ দিন কাক ডাকা ভোরে মুক্তিযোদ্ধা কনা মিয়ার বাড়ীর পুকুর পারে রশীদ বাহিনী নবীগঞ্জ থানায় অবস্থান করা পাকহানাদারদের ক্যাম্প টার্গেট করে অবস্থান নেয়। ঐ দলের সর্বকনিষ্ট সদস্য মুক্তযোদ্ধা ধ্রুব অত্যান্ত সাহসীকতার সহিত পাক হানাদারদের বাংকার ধ্বংস করার উদ্দ্যেশে গ্রেনেড হাতে ক্রলিং করে নবীগঞ্জ বানিয়াচং সড়কে উপর দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে । তার সহযোদ্ধাগণ শক্র সৈন্যকে লক্ষ্য করে মেশিনগানের গুলি ছুড়তে থাকে । শক্র সেনারা ও আক্রমন প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘন্টা ব্যাপি গুলি বিনিময় হয়। সূর্য্যের আলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে মুক্তি বাহিনী আত্নরক্ষার্থে পিছু হটতে থাকে । কিন্ত অসম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব’র আর পিছু হটা হলো না। শক্রের গুলিতে তার বুকের পাঝর ঝাঝরা হয়ে যায়। সাথে সাথেই শাহাদৎ বরণ করেন এই অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা । দীর্ঘক্ষন তার লাশ নবীগঞ্জ বানিয়াচং সড়কের উপর পড়ে থাকে। ঐ সময় পাশ্ববর্তী রাজনগর গ্রামের কিছু সাহসী যুবক জীবনের ঝুকি নিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুবের লাশ এনে সমাধীস্থ করে ঐ গ্রামের কবরের একপাশে । পরদিন ৫ ই ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গনে অবস্থিত পাক হানাদারদের ক্যাম্পে আক্রমন চালিয়ে দখল মুক্ত করেন নবীগঞ্জ শহর কে । কিন্ত দেশের জন্যে জীবন উৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধীটি আজও চিহ্নিত করা হয়নি । ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস,১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয় মুক্তিযোদ্ধের বীর সেনানীদের । কিন্ত ঠিকানা বিহীন মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুবের সমাধী আজও অচিহ্নিত অবস্থায় নবীগঞ্জ থানা সংলগ্ন গ্রামের কবরের একপাশে সমাধী আছে। একজন টগবগে যুবক যার তখনও মুক্তিযোদ্ধে যাওয়ার বয়স হয়নি । কিন্ত দেশ মাতৃকার টানে ধ্রুবের অপরিণিত বয়সে যোদ্ধে অংশ গ্রহন করে ছিল । স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪০ বছরে ও তার সহ যোদ্ধারা অনেক অনুসন্ধান করে তার জন্ম স্থান পিতা মাতার সন্ধান পায় নাই। অনেকেই বলেন শ্রীমঙ্গলের কোন এক চা বাগানের দরিদ্র শ্রমিক পিতা মাতার সন্তান ছিল শহীদ ধ্রুব। এক দিকে ঠিকানা বিহীন অন্যদিকে সমাধীস্থান অচিহ্নিত ,অবহেলিত। এই কি ছিল শহীদ ধ্রুবের স্বপ্নের বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা ?