ব্রিজ নির্মাণে দশাদিশে কাটছেনা মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :: পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্রিজ নির্মাণ বন্ধ করলো আর এলজিইডি নির্মাণে প্রস্তাব করছে। তবে সময় ও স্থানের ব্যবধান। শত বছর ধরে চলছে রশি টানাটানি। ব্রিজ নির্মাণে কাল্পনিক অযোতিক যুক্তি, মিথ্যা তথ্য সরবরাহ, অনিয়ম দুর্নীতি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায পাওনা না পাওয়া মামলায় দশাদিশে কাটছে না কপিলমুনি বিজ্র নির্মাণ। ইতিমধ্যে প্রায় ২কোটি টাকা ধ্বংস হয়েছে।

২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ব্রিজ নির্মাণ শুরু করলেও অনিয়ম দুর্নীতির ফলে আংশিক নির্মাণে পর বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তালা-কলারোয়া এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগে কথা চিন্তা করে ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ঠদের সাথে নিয়ে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য এলাকাও পরিদর্শন করেছেন।

কপিলমুনি-জেঠুয়া সংযোগ ব্রিজ আদৌ হবে কিনা সে বিষয়ও এখন অনিশ্চিত। তবে এলাকাবাসী আজও আশা করে জনপ্রতিনিধিদের এক দিন শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আর কপোতাক্ষ নদের উপর দিয়ে কপিলমুনি-জেঠুয়া সংযোগ সড়ক সে দিন নির্মাণ হবে। পূরণ হবে স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর শেষ ইচ্ছা। বর্তমান সময় তালা-কলারোয়া এমপি নতুন করে ব্রিজ তৈরীর উদ্যোগ নিলেও চলছে স্থান নির্ধারণ নিয়ে রশি টানাটানি। এক পক্ষ বলছে তালা উপজেলার ঘোষনগর-কানাইদিয়া অন্যপক্ষ বলছে কপিলমুনি আংশিক নির্মাণ ব্রিজ সম্পন্ন করতে। অথবা কপিলমুনি নিকটবর্তী স্থানে ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

খুলনা পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে সরাসরি কলিকাতা যাওয়ার সড়ক নির্মাণে স্বপ্ন দেখে ছিল আজ হতে শত বছর পূর্বে আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুু। সে মতো টাকাও সংগ্রহ করে ছিলেন তিনি। তৎকালীন কিছু প্রতিবন্ধকতায় সে সময়ও বাস্তবায়ন সম্ভম হয়নি ব্রিজ নির্মাণ।

তবে তৎকালীন সময় ব্রিজ নির্মাণে টাকা কলিকাতার ব্যাংকে জমা রাখেন বলে তার জীবনী থেকে জানা যায়। বর্তমানে কপিলমুনি খননকৃত কপোতাক্ষ নদের উপর দিয়ে জেঠুয়া হয়ে সাতক্ষীরা সদর পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে শুধু দুরত্বই কমবে না। দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এলাকাবাসীর দীর্ঘ দীন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে কপিলমুনি কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণে।

তারই ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালে আওয়ামীলীগ সরকার সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ব্রিজ নির্মাণ কাজে হাত দেয়। কাজ কিছু দিন চলার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির ফলে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ব্রিজের আংশিক কাজ সম্পূর্ণ হয়। পরবর্তীতে পলি পড়ে কপোতাক্ষ নদের মৃত্যু হয়। সে সাথে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও স্বপ্নের মৃত্যু হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালিন সময় কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যয় ধার্য করা হয় ১কোটি ৯৩ লাখ ৪২হাজার ৯০০শত ১৯টাকা ৫৫পয়সা। কাজের মান প্রশ্নে পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পায় ২কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। নির্মাণের দায়িত্বপায় এন হক এসোসিয়েট নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কার্যক্রম শুরু করে ২০০০ সালের ১২ই এপ্রিল।

এরপর ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা হতে ১কোটি ৬৭লাখ ৭২২টাকা উত্তোলণ করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী পর্যায় বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে দায়েরকৃত মামলা নং পি-৫৮/০৬ ধারা ৪০৬/৪২০/১০৯/৩৪। যার ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা সহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘ সূত্রতার কারনে ব্রিজ নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

ব্রিজটির বাকী কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপ নামের আরো একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় উক্ত নির্মাণ কাজ শুরু করে। সে সময় সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কপোতাক্ষ নদের ¯্রােত এ বাঁধা পাবে মর্মে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া সংযোগ ব্রিজ ও সড়ক নির্মাণ কাজ ১৭ বছরেও সমাপ্ত হয়নি। যতদুর জানাযায় আইনি জটিলতা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সাতক্ষীরা এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে, তালার ঘোষনগর-কানাইদিয়া প্রস্তাবিত ব্রিজটি সাতক্ষীরা জেলা এলজিইডি এর অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এবং সেটা তালা উপজেলার মধ্যে নির্মিত হবে।

অপর দিকে কপিলমুনি নির্মাণাধীন (স্থগিত) ব্রিজটির সকল কার্যক্রম খুলনা জেলা এলজিইডি অফিস এর আওতাধীন এবং বরাদ্ধটা ঐ অফিস দিয়েছিল। সুতরাং ঘোষ নগর কানাইদিয়া ব্রিজের সাথে কপিলমুনি ব্রিজের কোনো সম্পর্ক নেই। পুনরায় কপিলমুনি-কানাইদিয়া ব্রিজ পুনঃ নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই খুলনা জেলা এলজিইডি অফিস এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।

অন্যদিকে কপিলমুনি ব্রিজ নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত দু’পারের মানুষের শত শত একর জমি বাবদ তাদের প্রাপ্য টাকা আজোও পরিশোধ করা হয়নি। অথচ ব্রিজ নির্মাণ হলে জেলার পাইকগাছা হতে সাতক্ষীরার দুরত্ব কমে যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নসহ বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করতো দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। এক কালের ভয়াল কপোতাক্ষ মৃত্যু হতে পারে এমন আশঙ্কায় যে চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল তার অবসান হয়েছে। কারন পরবর্তীতে কপোতাক্ষ নদের মৃত্যু হয়ে মরা খালে পরিণত হয়।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয় কপোতাক্ষ নদ খনন করে নতুন জীবন দিয়েছে। আবার দাবি উঠছে দুই উপজেলার লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত কপিলমুনি-জেঠুয়া ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here