সায়ান তানভি :: আলোচনা সভা বেশ বিরক্তিকর, তবে এটা মূলত আমাদের আলোচকদের যোগ্যতার অভাবের কারনেই, তারচেয়ে জনসভায় মজা আছে, উৎসব উৎসব ভাব থাকে ।
যদিও রাজনীতিকদের কথা শুনতে আমি আগ্রহ বোধ করি না, এমনকি পড়তেও না, এদের পড়াশোনা নাই, শু ভবোধ নাই, সততা নাই, আধুনিক চিন্তা নাই, অন্যদের জন্য ভাবার মানসিকতা পুরোপুরি অনুপস্থিত, অথচ তারা জন প্রতিনিধি ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদচারনার কারনে অনেক হোমরা-চোমরা মানুষের দেখা পাই প্রায়ই ক্যাম্পাসে । লেখক, বুদ্ধিজীবী, গায়ক থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত । মন্ত্রীগুলো ছাড়া অন্যদের কথা শোনার চেষ্টা করি , কেউ মুগ্ধ করে, কেউ আশাহত ।
তবে একবার এক মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যেতে বেশ আগ্রহ বোধ করলাম । আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ,কয়েকদিন আগে পত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম, বেশ ভারী ভারী কথা ছিল তাতে, তবে আমাকে আকৃষ্ট করেছে তাঁর পড়ুয়া সত্ত্বাটি, তিনি বই পড়েন এবং তাঁর সংগ্রহ বিশাল । এটা চমৎকৃত হওয়ার মতো বিষয়, রাজনীতিবিদদের মধ্যে ব্যতিক্রম ।
এই ব্যাপারটি আমাকে আগ্রহী করেছিলো তাঁর বক্তৃতা শুনতে এবং আমি খুব আনন্দের সংগে বলবো , তিনি খুব ভাল বক্তা, মুগ্ধ হয়েই তাঁর পুরো বক্তব্য আমি শুনেছিলাম, সেখানে সস্তা, স্থুল, অর্থহীন কথা ছিল না, তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলছিলেন, মার্ক্সের উদ্ধৃতি দিচ্ছিলেন, শেলি থেকে পারস্যের কোন কবিকেও কোট করছিলেন, এটা বেশ চিত্তাকর্ষক বক্তৃতা ছিল, তাঁর শিক্ষা আর প্রজ্ঞা সম্পর্কে ভাল ধারনা পেয়েছিলাম ।
সম্প্রতি এই রাজনীতিকের বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে । বিতর্ক হোক সমস্যা নেই, তবে আক্রমন হলেই আপত্তি । বলার অধিকার সবার থাকা উচিৎ, পছন্দ না হলে বর্জন করবেন, কিন্তু কণ্ঠ রোধের চেষ্টা বর্বরতা – অসভ্যতা – অনাধুনিকতার নিদর্শন । যদিও আমরা কতটা সভ্য অথবা আধুনিক হতে পেরেছি তা প্রশ্নসাপেক্ষ ।
লতিফ সিদ্দিকী হজের অসারতার কথা বলেছেন, আমি একমত, পাথুরে রাস্তায়, বালির মধ্যে গড়াগড়ি আর পাহাড়ে পাহাড়ে দৌড়ানোর মাঝে আমি কোন অর্থ খুজে পাই না । এটা বরং অর্থের শ্রাদ্ধ মনে হয় । এই কথা বলার অধিকার কি আমার নেই ? আবার যারা ভাবেন হজের মাধ্যমে পরকালে সুরা আর হুরের সন্ধান পাবেন তাদেরও অধিকার আছে তা প্রচার করার ।
আমাদের এই বোধটা জাগ্রত হওয়া উচিৎ ,প্রতিটা মানুষ এক নয় ,তাদের চিন্তা – দর্শন -জীবনাচারও ভিন্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক । তাই কারো কথা – কাজ অপছন্দ বা নিজের বিশ্বাসের বিপরীত হলেই অসংযত প্রতিক্রিয়া দেখানো সভ্যতার লক্ষণ নয় ।
অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, পরমত সহিষ্ণুতা তৈরি করতে হবে, হরহামেশা অনুভূতিতে আঘাত লাগার সুযোগ না দিয়ে অনুভূতিকে ভোঁতা হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হবে । এগুলো করতে হবে, নয়ত অসভ্যতার যে অন্ধকার গ্রাস করে আছে সবাইকে তা কাটবে না সহসা ।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল : tanvir_cu@ymail.com