লক্ষ্মীপুর-১ রামগঞ্জ: ১৪ দলীয় জোট সরব, ২০দলীয় জোটে নিরবতা জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুর-১ রামগঞ্জ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি জোট অধ্যুষিত এই সংসদীয় আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও বড় দুই জোটের ডজন খানেক সম্ভাব্য প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় চলছে গণসংযোগ, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রুপিং ও লবিং। ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা। কে কোন দলের মনোনয়ন পাচ্ছে, কে হলে ভালো হয় তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষন। জাতীয় পর্যায়ের ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও ব্যাক্তিগত ভাবে ব্যাপক দান-অনুদান প্রদান করে যাচ্ছেন।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটের একাধিক প্রার্থী ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা, গণসংযোগ ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা সমাবেশ করে ভোটের মাঠে সরব থাকলেও, ২০দলীয় জোটে চলছে নিরবতা। ২০দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুধুমাত্র পোষ্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে তাদর প্রার্থীতা ঘোষনা করছেন। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত হলেও জেলার এ আসনে বর্তমানে আওয়ামীলীগের শক্তি সমর্থন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-১ রামগঞ্জ আসনে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি বর্তমানে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স এর কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র। লায়ন এম এ আউয়াল আগামী নির্বাচনেও ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি এলাকায় সভা-সমাবেশসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে উপস্থিত থাকছেন ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, শিল্পপতি সফিকুল ইসলাম নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে উপস্থিত থাকছেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো. শাহজাহান এলাকায় নানা ভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয়ভাবেও যোগাযোগ রাখছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন খান এলাকায় নানা ভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয় ভাবেও যোগাযোগ রাখছেন।

এছাড়া তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকার বিজয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় প্রতিদিন ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মমিন পাটওয়ারী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. শোয়ায়েব হোসেন (সখা), শামছুল হক (মিজান) ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন।

বিএনপির এ ঘাঁটিতে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় আছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার হারুনুর রশিদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনির আহমেদ, নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি মনোনীত বিজয়ী এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেন ও গাজীপুর জেলা ছাত্র দলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. কফিল উদ্দিন পাটওয়ারী।

এদের মধ্যে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্দিনে তেমন ভূমিকা রাখতে না পারা এবং দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারায় তার প্রতি আস্থার সংকট রয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার হারুনুর রশিদ সার্বিকভাবে বেশ জনপ্রিয়, সদালাপি হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে ও এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও তার আসা যাওয়া রয়েছে। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোসহ দলের শৃংখলার জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনির আহমেদ।

এ ছাড়া এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশায় কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের শরীক দল এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম।

ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স এর কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র সংসদ সদস্য লায়ন এম এ আউয়াল বলেন, আমি গত পাঁচ বছরে রামগঞ্জে এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎসহ কোন কিছুই আমার উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েনি। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সমৃদ্ধ রামগঞ্জ গড়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আমার করা উন্নয়ন ও জোটগত কারণে আগামী নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবেন।

আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান বলেন, গত সাড়ে চার বছর ধরে আমি রামগঞ্জ উপজেয় দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে আপামর জন-সাধরেনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান সফল করতে প্রতিটি প্রোগ্রামে অনুদান প্রদান করেছি। রামগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে আনতে দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হতে পারেনি। নেত্রী আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দিলে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নৌকাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে দীর্ঘ ৪৭ বছর পর এ আসন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শেখ হাসিনার একজন ত্যাগী ও পরিক্ষিত কর্মী। রামগঞ্জে আমার ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা কালে আমি যে উন্নয়ন করেছি তা এখনো মানুষের মুখে মুখে রয়েছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে এখানে নৌকার বিজয় নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো. শাহজাহান বলেন, আমি সব সময় দলের নেতা-কর্মীদের জন্য কাজ করেছি, তাদের সুখে দুঃখে পাশে থেকেছি। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে ইনশাল্লাহ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এ আসনটি আমি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবো।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সফিক মাহমুদ পিন্টু বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে রামগঞ্জের মানুয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দিবে, আমি তাঁর হয়ে কাজ করব।

এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, রামগঞ্জের মাটি ও মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আমি এক সময় এলাকায় বিএনপির সংগঠন করতাম। রামগঞ্জ বিএনপি আমার হাতে গড়া সংগঠন। জোটগত ভাবে নির্বাচন হলে আমার মনোনয়ন ও বিজয় নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।

ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলের নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করেছি এবং নিজ এলাকা রামগঞ্জের জনগণের সাথে সব সময় আছি এবং থাকবো। আমি আশা করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির মনোনয়ন আমাকেই দেবেন।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনির আহমেদ বলেন, আমার নিজ এলাকা রামগঞ্জের মাটি ও মানুষের সাথে আমার সুসম্পর্ক আছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোসহ দলের শৃংখলার জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী দল আমার দীর্ঘদিনের ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here