লক্ষ্মীপুর : সয়াবিন চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে  লক্ষ্মীপুর জেলায়। বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৮০ ভাগ সয়াবিন উৎপাদিত হচ্ছে।

উৎপাদন খরচ কম, ফলনও ভালো এবং ভালো দাম পাওয়ায় জেলার চাষীরা অন্য রবি শষ্যের পরিবর্তে সয়াবিন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানাযায়, ১৯৮২ সালে এ জেলায় মাত্র ১হেক্টর জমিতে পরীক্ষামুলক ভাবে সয়াবিন চাষ হলেও পরবর্তীতে প্রতি বছর এ চাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা দাড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। যাহা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার ৮০ ভাগেরও বেশী বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।

বর্তমানে দেশে উৎপাদিত সয়াবিন শুধুমাত্র পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সয়াবিনের বহুমাত্রিক ব্যবহারের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানী ও এ কেন্দ্রীক শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে জেলায় সয়াবিন চাষ কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন সংশিস্নষ্টরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, জেলায় গত রবি মৌসুমে ৩১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষের লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে।

প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ১ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন। কিন্তু গত মৌসুমের শেষ মুহুর্তে অতিমাত্রায় ঝড় বৃষ্টি ও উপকূলীয় এলাকায় জ্বলোচ্ছাসের কারণে অনেক জমিতে উৎপাদিত সয়াবিন পানিতে পঁচে নষ্ট হয়ে  উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটে।

গত মৌসুমে এ জেলায় মোট উৎপাদন কমে দাড়ায় ৫৭ হাজার ১১৫ মেট্রিক টনে। অপর দিকে এ সময়ে উৎপাদিত সয়াবিনের মাণ খারাপ হওয়ায় এবং বিদেশ থেকে গোটা সয়াবিন আমদানী  করায় কাংখিত দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের মূখে পড়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের লোকসান কাটিয়ে উঠার জন্য জেলার কৃষকরা ব্যাপক হারে সয়াবিন চাষ করেছে। এ বছর সয়াবিন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ৭৯২ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার ৬১ মেট্রিক টন। এ পর্যনত্ম এ জেলায় চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা ওসমান খাঁন জানান, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও জেলায় লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে সয়াবিন চাষ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জেলার ৫টি উপজেলায়ই সয়াবিন চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে চর অধ্যুষিত কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় সব চেয়ে বেশী সয়াবিন চাষ করা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সদর ও রায়পুর উপজেলা। চরাঞ্চলের মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সঠিক সময়ে কৃষকদের কাছে সার ও বীজ পৌঁছার কারনে এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

এ অঞ্চলের সয়াবিনের বড় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান মিন্টু জানান, দেশে উৎপাদিত সয়াবিন থেকে তেল উৎপাদন করা হয় না। তবে দেশে উৎপাদিত  সয়াবিন দিয়ে পোল্ট্রী খাদ্য তৈরী করা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও সয়াবিন  থেকে তেল, পোল্ট্রি খাদ্য, সয়াবিস্কুট, সয়মিট, সাবানসহ বহু মাত্রিক পণ্য  উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

আমাদের দেশে সয়াবিনের বহুমাত্রিত ব্যবহার করা এখনো শুরু হয়নি। স্থাপন করা হয়নি এ সংক্রানত্ম মিল কারখানা।

কমলনগরের সয়াবিন চাষী মোশারফ হোসেন ও আবু নোমান জানান, অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে সয়াবিন চাষ অনেক বেশী লাভজনক। প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। আর  ভালো ফলন ও দাম পাওয়া গেলে আয় হয় উৎপাদন খরচের প্রায় ৪ গুনের বেশী  ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। যা অন্য কোন ফসলের ড়্গেত্রে পাওয়া যায়না।

জহিরুল ইসলাম শিবলু/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here