জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: জমি দিবেন না ? সমস্যা নাই। পরে টাকাও যাবে জমিও যাবে। এখনো সময় আছে জমি দিন, টাকা নিন। যে কোন উপায়েই আমরা এখানে ব্রীকফিল্ড করবো। এভাবেই হুমকি দিয়ে সদ্য রোপনকৃত চাষ করা ধানের চারাসহ জমি থেকে ভেকো-মেশিন দিয়ে ব্রীকফিল্ড তৈরী করার জন্য মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। এ ছাড়াও মাটি বিক্রি না করায় ট্রলি দিয়ে ধানের জমি থেকে জোর করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ব্রীক ফিল্ডের মালিকরা।
এসব ঘটনায় ফুসে উঠেছেন জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা ও শাহারপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বাধ্য হয়ে ৫শতাধিক গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার রিজাউল করীমের নিকট জমা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারীরা এ ঘটনায় ভোলাকোর্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির আহম্মেদ মানিককে দায়ী করেন। তার নেতৃত্বে শাহারপাড়া গ্রামের আবদুল হক ১৫ শতাংশ, নুরুল হক ১৫ শতাংশ, আবদুর রহমান ৭৮ শতাংশ, আবদুল আজিজ ৯ শতাংশ, মোঃ আমির হোসেন খোকা ৩৪ শতাংশ, আবদুল মান্নান ২১ শতাংশ, আবু হানিফা ৩০ শতাংশ, সামছুদ্দিন চৌধুরী ২৭ শতাংশ, শহিদ উল্যা ১২ শতাংশ, আবদুল রহিম ১২ শতাংশ, মাহফুজ ১২ শতাংশ, মোঃ তারেক ৩০ শতাংশ, মোঃ জাকির হোসেন ২৩ শতাংশ, নজরুল ইসলাম মাষ্টার ১৮ শতাংশ, মোঃ কাশেম ৩৩ শতাংশ, মোঃ মাহফুজ ৩৩ শতাংশ, আবুল হাশেম ২১ শতাংশ, মোঃ সাইফুল ইসলাম ১২ শতাংশ, মাওঃ আলমগীর ১২ শতাংশ, জাহাঙ্গীর আলম ১২ শতাংশসহ মোট ৪৫৯ শতাংশ জমি দখল করা হয় ব্রীকফিল্ড তৈরী করার জন্য।
ভোলাকোর্ট ইউনিয়নের শাহারপাড়া গ্রামের মোঃ নুরুল হক জানান, গত শুক্রবার আমার পৈত্রিক জমি থেকে চেয়ারম্যানের লোক মোঃ মহিন, মোঃ রাশেদ ও মিল্লাদসহ ১০-১২ জন ভেকো দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যায়। এ সময় আমি বাধা দিলে তারা আমাকে গাল-মন্দ ও হুমকি দিয়ে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে আমি রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি।
শাহারপাড়া গ্রামের আরেক অধিবাসী আমির হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নতুন ইটভাটা তৈরীর অনুমতি না দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
স্মারকলিপিতে গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, শুধু ভোলাকোট ইউনিয়নেই রয়েছে ১১টি ইটভাটা। আর দেহলা গ্রামে রয়েছে ৪টি ইটভাটা। ইটভাটার মাটি আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত দানবীয় চাকার ট্রলিতে এলাকার রাস্তাঘাট সব ভেঙ্গে গিয়ে একাকার। শুধু তাই নয়, ধুলোবালির কারনে স্থানীয় এলাকাবাসীর রোগ-বালাইও বেড়েছে কয়েকগুন।
এ ছাড়া একই গ্রামে ৪ টি ইটভাটা থাকায় এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস চরম আকার ধারন করছে। চাষের জমি ধান চাষ করতে বাধা দিচ্ছে ভাটার মালিকরা। ধানের চারা রোপন করার পরও ধানগাছসহ মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটার মালিকরা। বর্তমানে একটি মহল জোর পূর্বক জমির উপর রাস্তা করে নতুন আরো একটি ইটভাটা নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। এ সময় জমির মালিকরা বাধা দেয়ায় কয়েকজন বয়স্ক মানুষকেও মারধর করা হয়েছে।
রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানভীর আহম্মেদ সরকার জানান, এ ভাবে মাটি কাটার কারনে জমির টপ-সয়েল নষ্ট হচ্ছে। একটি জমির টপ-সয়েল ফিরে আসতে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগে।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ ক ম রুহুল আমিন জানান, এ রকম বে-আইনি কাজ কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এছাড়া সরকার দিন-রাত পরিশ্রম করে রাস্তা নির্মাণ করছে, অথচ ইটভাটার ট্রলির কারনে তা ক্ষতিগ্রস’ হচ্ছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আমি জোরালো প্রতিবাদ করেছি। নতুন ইটভাটা যেন কোনভাবেই না হয় সে জন্য আমরা কাজ করবো।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করীম জানান, ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয় জেলা থেকে। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে চেষ্টা করবো যেন কোনভাবেই এখানে নতুন কোন ইটভাটা না হয়।
এ দিকে গ্রামবাসী জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট ঘটনায় অভিযোগ দেয়ায়, হুমকি দেয়া হচ্ছে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য।
এ সব বিষয়ে ভোলাকোর্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির আহম্মেদ মানিকের সাথে গত কয়েকদিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।