জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি  :: আজ বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ শহিদ (৩৫) হত্যার ১৭ তম মৃত্যুবাষির্কী। ১৭ বছরেরও আলোচিত এ হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েছে। সন্তান হারা মুক্তিযোদ্ধা পিতা সুজায়েত উল্যা মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানায়, ২০০৩ সালের ৪ জুন বিকেলে এক ব্যক্তি শহিদের মোবাইলে ফোনে কল করে। এরপর তিনি মোটর সাইকেল নিয়ে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে বের হয়ে যান। রাতে আর বাসায় ফেরেননি। রাতে বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ করে তাঁর কোন সন্ধান পায়নি। পরদিন সকালে পরিবারে পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। একই দিন স্থানীয় লোকজন শহরের উত্তর তেমুহনীর পেট্রল পাম্পের কাছে শহিদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে পুলিশ মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে। তখন স্থানীয়দের সন্দেহ জাগে, পাম্পের পাশে জেলা আওয়ামী লীগের ততকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ফজলুল করিমের মালিকানাধীন ইউনিক হোটেলে (আবাসিক) শহিদ থাকতে পারেন। স্থানীয়রা সেখানে তল্লাশি চালাতে চাইলে হোটেলের ব্যবস্থাপকসহ অন্যরা বাধা দেয়।

পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ হোটেলটির তৃতীয় তলার ১২৪ নম্বর কক্ষ থেকে হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ক্ষতবিক্ষত শহিদের মরদেহ উদ্ধার করে। মৃত্যুর পর মুখে এসিড ঢেলে দেওয়ায় দাঁত ও জিহ্বা গলে মুখমন্ডল ফুলে কালো হয়ে যায়। তখন পাশের কক্ষের বোর্ডার সৈয়দ আল আমিন মেজবাহ, ব্যবস্থাপক হাবিব উল্যা জহির ও মালিক আ ন ম ফজলুল করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যার ঘটনায় ৬ জুন নিহতের বাবা মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত উল্যা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই বছরে অক্টোবরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি নোয়াখালী সিআইডিকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ৬ আগস্ট অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির লক্ষ্মীপুর ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক শান্তিরঞ্জন চক্রবর্তী। এতে বাদী আদালতে নারাজি দেন। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের ২২ মার্চ নোয়াখালী সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. নুরুল ইসলাম সরকার ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সেলিম, হাবির উল্যা জহির, রাজু, আবদুল হাই, খোরশেদ আলম, মাহবুবুল আলম বাবু, মিরন, বাবুল ও জহির উদ্দিন সাজুকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার আসামি মিরন বর্তমানে বিদেশে এবং অন্যরা আসামিরা জামিনে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক জন জানান, শহিদ রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁদের ধারণা, আওয়ামী লীগের কয়েক জনের সাথে মিলে বিএনপির একটি পক্ষ শহিদ হত্যা বাস্তবায়ন করেছে।

নিহত ছাত্রলীগ নেতা শহিদের ছোট ভাই জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ১৭ বছরেও ভাই হত্যার বিচার না হওয়ায় এখন আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। মামলার সাক্ষীরাও সময় মতো আদালতে সাক্ষী দিচ্ছেন। একটি অধির্ষ শক্তির ইশারায় মামলাটির কার্যক্রম এগোচ্ছে না। তাই দূত সময়ের মধ্যে প্রকৃত খুনিদের বিচার করে রায় কার্যকর করার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।

এদিকে খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে শহিদ সৃতি সংসদ প্রতিবছর অন্দোলন করে আসছে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা শহিদের ১৭তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কোরান খতম, করব জেয়ারত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here