জহিরুল ইসলাম শিবলু, জেলা প্রতিনিধি

ইউনাইটেডনিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদরসহ জেলার ৫টি উপজেলার লাইন্সেস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতিবিহীন ৮২টি ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইট ভাটা মালিক সমিতি প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার চাঁদা নিয়ে ভাটা চালু করার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় ও কৃষি উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার কারনে এসব ভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধানত্ম নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। তবে প্রশাসনের এ নির্দেশ অমান্য করে বাংলার ভাটার মালিকরা কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে শিঘ্রই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জেলার রামগঞ্জ উপজেলার উত্তর শৈরশৈই গ্রামের ফসলি জমিতে এমএমবি ব্রিকর্স, আব্বাস ব্রিকর্স এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, মেঘনা ব্রিকর্স এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, সুধারাম এবিএম ব্রিকর্স, আকারতমা এসবিএম ব্রিকর্স, এফবিএম ব্রিকর্স, কাটাখালী এইচটিসি ব্রিকর্স, ভাট্রা রামসিং পুর এমএসবি ব্রিকর্স, লক্ষ্মীধর পাড়া মোতালেব ব্রিকর্স, হাজীরপাড়া এমডিএ ব্রিকর্স, দেহলার মদিনা ব্রিকর্স, জে বি এম ব্রিকর্স, আজিমপুর পাটওয়ারী ব্রিকর্স, সদর উপজেলার মৌলভীর হাট এলাকার সাগর ব্রিক ফিল্ড, দত্তপাড়া পদ্মাপুকুর পাড়ে ফারুক ব্রিকস, মজুচৌধুরীর হাট এলাকা একেপি ব্রিকস, মান্দারীর এফএমবি ব্রিকস, দিঘলী পদ্মা ব্রিকস, পালের হাট ফিরোজ ব্রিকস, কুশাখালী জে আর ব্রিকস, মা ব্রিকস, রামগতি উপজেলার হাজী আওরঙ্গ ব্রিকস, সাহেদ সাব্বির ব্রিকস, পান্না ব্রিকস, রায়পুরের ২নং চরবংশী ইউনিয়নে মুরাদ হোসেনের ব্রিক ফিল্ডসহ অবৈধ ৮২টি ইটভাটার মালিকরা প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ইট পোঁড়ানোর প্রসত্মতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলা ভাটা সমিতি প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে জেলা প্রশাসন এসব বাংলা ভাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, জেলার বেশীর ভাগ বাংলা ভাটার মালিকরা খুবই প্রভাবশালী এদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থক।  ফলে এ দিকে রাজনৈতিক দাপট অন্যদিকে প্রভাবশালী হওয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের অবৈধ ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে করে জেলার শত শত একর কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এ এসব ভাটায় কাঠ ব্যবহার করার ফলে বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে। এ নিয়ে সমপ্রতি লক্ষ্মীপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বক্তারা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে অবৈধ বাংলা ভাটা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানান।

পরে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক একে এম টিপু সুলতান যোগদান করার পর পরই অবৈধ বাংলা ভাটা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দেন।

বাংলা ভাটার মালিকরা জানান, বর্তমান বাজারে একটি হাওয়াই ইটভাঁটা স্থাপন করতে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়। অপরদিকে একটি বাংলাভাটা করতে মাত্র কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়। এ জন্যে তারা বাংলা ভাটা স্থাপন করে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রশাসন ও  র‌্যাবের সহযোগীতায় যেসব বাংলাভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন তারা এবারও একই অবস্থায় ইট ভাটাগুলো চালু করার পাঁয়তারা করছেন এবং হাইকোর্টের একটি আদেশের দোহাই দিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এর ইন্ধন যোগাচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার এনডিসি মোঃ আরিফুজ্জামান বলেন, জেলার দেড়শ’ ইটভাটার মধ্যে প্রায় ৮২ টি ইট ভাঁটা অবৈধ। এসব ইটভাটা স্থাপনের আগে মানা হয়নি সরকারের নীতিমালা। ইট তৈরী হচ্ছে নীতিমালা লংঘন করে। এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন নেই।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন বলেন, বাংলা ইটভাটা বন্ধের ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে বাংলা ইটভাটা মালিকদের তা অবহিত করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক একেএম টিপুু সুলতান বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে জেলার ৮২ টি অবৈধ  বাংলা ভাটা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কোন ব্যক্তি বা সমিতি চাঁদা তুলে থাকেন তা হলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here