রেগুলেটর বিকল, পানির অভাবে বোরো আবাদে ভোগান্তিতে কৃষক

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটের মেঘনা নদী সংলগ্ন রহমতখালী খালের ওপর স্লুইস গেইটের নেভিগেশন লকসহ ১৪ ভেন্টের দুটি রেগুলেটর বিকল হয়ে পড়েছে। রেগুলেটর দুটির প্রায় সবগুলো গেট বন্ধ থাকায় নদী থেকে পানি খালে প্রবেশ করতে পারছে না। পর্যাপ্ত পানির অভাবে রোপণ করা যাচ্ছে না ধানের চারা।

এমন পরিস্থিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো কৃষক। এতে করে চলতি মৌসুমের বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মজুচৌধুরীরহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেগুলেটর দুটির মোট ২৮টি গেট রয়েছে। মূল রেগুলেটরের ১৪ গেটের মধ্যে দুটি ছাড়া বাকি ১২টি বিকল হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। পুরনো রেগুলেটরের ১৪টি গেটই বন্ধ। এর মধ্যে তিনটি ভেঙে গেছে। জোয়ারের সময় গেট খুলতে না পারায় রহমতখালী খালে পানি ঢুকতে পারছে না। ভাঙা গেট দিয়ে কিছু পানি প্রবেশ করলেও ভাটার টানে ফের নদীতে চলে যায়। ভরা মৌসুমে পানির অভাবে জমিতে লাঙল দিয়ে হাল দিতে পারছে না কৃষকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের হাজারো কৃষক। ব্যাহত হচ্ছে বরো আবাদ।

বোরো মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা মেঘনা নদীর জোয়ারের পানির ওপর ভরসা করে আবাদ করে থাকেন। বিগত বছর গুলোর মৌসুমের এমন সময় পানির প্রয়োজন হলে রেগুলেটরের গেটগুলো খুলে দেওয়া হতো। মেঘনার জোয়ারের পানি রহমতখালী খাল হয়ে আশেপাশের বিভিন্ন খালে ঢুকতো। এসব পানি খালে খালে পৌঁছে যেত কৃষকের দ্বারপ্রান্তে। পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তির পর গেট বন্ধ করে দেওয়া হতো।

কিন্তু চলতি মৌসুমে রেগুলেটরের প্রায় সবগুলো গেট বন্ধ থাকায় পানি প্রবেশ করতে পারছে না, যে কারণে কৃষকরা এখন বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় কৃষক হাবিব উল্যা, জাবেদ হোসেন ও আমিন মিয়া জানান, বোরো মৌসুমে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার আগে-পরে চার থেকে পাঁচদিন জোয়ার আসে। ওই জোয়ারের পানি খালে ঢুকলে সে পানি পাম্প দিয়ে ক্ষেতে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় সবগুলো গেট বন্ধ থাকায় পানি খালে পৌঁছায় না। এতে করে আমরা জমিতে এখন পানি দিতে পারছিনা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর উভুতি, কালির চর, ভবানীগঞ্জ, টুমচর, জকসিন, মান্দারী, মিরিকপুর, উত্তর জয়পুর, দত্তপাড়া, কুশাখালী ও তেওয়ারীগঞ্জসহ জেলার পূর্বাঞ্চল এবং কমলনগর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, খালে পানি নেই। বেশিরভাগ কৃষক পানির অভাবে বোরো আবাদ করতে পারছেন না। কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে পুকুর থেকে পানি নিয়ে চারা রোপণের চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় সেচ মালিক মনা মিয়া ও জাফর উল্যা জানান, পানি না পেয়ে কৃষকরা হতাশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানির অভাব না মিটলে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বেন। মজুচৌধুরীরহাট রেগুলেটরের গেইট অপারেটর মো. ফয়েজ জানান, দুটি রেগুলেটরের ২৮টি গেটের মধ্যে ৫টি ভেঙে গেছে। বাকি ২৩টি গেটের ওঠা-নামার তার ছিঁড়ে গেছে, যে কারণে গেটগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গেট খুলতে না পারায় ধান চাষে কৃষকরা পানি পাচ্ছে না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম বলেন, রেগুলেটরের গেট খুলতে না পারার বিষয়টি অবগত হয়েছি। মেরামতের জন্য লোকজন খবর দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে, তাতে বোরো আবাদে কৃষকদের পানির অভাব কাটবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here