জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: রূপচাঁদা মাছ পরিচয়ে লক্ষ্মীপুরের মাছ বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে সামুদ্রিক নিষিদ্ধ মাছ পিরানহা। অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিক্রি করছেন এ রাক্ষুসে মাছ। পিরানহা রাক্ষুসে মাছ হওয়ায় অন্যান্য মাছের বংশ বিস্তারে এ মাছ মারাত্মক হুমকি। যে কারণে বাংলাদেশে পিরানহা মাছ উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ। তবুও লক্ষ্মীপুরে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে পিরানহা। ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পরিবহনে করে এ মাছ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাজারে এলেও দেখার যেন কেউ নেই?

লক্ষ্মীপুরের অনেক মাছ বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে অসাধু ব্যবসায়ীরা পিরানহা বিক্রি করছেন দেদারছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কম হলেও পিরানহা বিক্রিতে লাভ বেশি।

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির রূপচাঁদা ভেবে পিরানহা কিনে বাড়ি ফেরার পথে কেউ একজন তাকে বলেছেন এ মাছ রাক্ষুসে, রূপচাঁদা নয়। পরে তিনি ফের বাজারে গিয়ে রাক্ষুসে পিরানহা মাছ ফেরত দিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীকে।

হুমায়ুন কবির বলেন, সামুদ্রিক রূপচাঁদা মাছ বলে আমার কাছে ১৮০ টাকায় দামে এক কেজি মাছ বিক্রি করেছেন বিক্রেতা। পরে রাক্ষুসে মাছের পরিচয় পেয়ে ফেরত দিয়েছি। এভাবে প্রতিদিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পিরানহা বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী পিরানহা দিয়ে ঢালা সাজিয়ে বসে আছেন। রূপচাঁদা বলে বিক্রিও করছেন। কি মাছ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন রূপচাঁদা। কোথায় থেকে এ মাছ আসে জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, লক্ষ্মীপুরে চাষ হয়। কুমিল্লা থেকেও আসে। তবে লক্ষ্মীপুরের কোথায় পিরানহা চাষ হয় তা জানা সম্ভব হয়নি।

লক্ষ্মীপুর এক চাকুরীজীবি এলামুল হক বলেন, প্রায় প্রতিদিন সকালেই লক্ষ্মীপুর মাছ বাজারে পিরানহা বিক্রি হয়। তিনি রাক্ষুসে পিরানহা মাছের বিষয়ে জানেন, যে কারণে ওই মাছ তিনি কিনেন না। তবে এ মাছ সম্পর্কে যারা অবগত নয় তারা প্রতিনিয়ত কিনে খাচ্ছেন।

জেলা মৎস্য অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. এরশাদ শেখ জানান, দেশের জলজ পরিবেশের সঙ্গে পিরানহা সংগতিপূর্ণ নয়। পিরানহা রাক্ষুসে স্বভাবের তাই জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্রের জন্য এগুলো হুমকি স্বরূপ। এ কারণে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর পিরানহার পোনা উৎপাদন, চাষ, বংশ বিস্তার ও ক্রয়-বিক্রিয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যা বলেন, লক্ষ্মীপুরের কোথায়ও পিরানহা চাষ হয় কিনা তা তাদের জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে। যদি কেউ পিরানহা চাষ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও নিষিদ্ধ ওই মাছ ধ্বংস করা হবে। হাট-বাজারে অভিযান পরিচালনা করে পিরানহা জব্দ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here