আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২স্টাফ রিপোর্টার :: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটি (বিহাস) সংলগ্ন তার বাসভবনের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (আওয়ামীপন্থি) সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বিভাগীয় সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক শফিউল ইসলামএদিকে রাবি সহযোগী অধ্যাপক শফিউল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে নতুন একটি জঞ্জি সংগঠন। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা এ হত্যার দায় স্বীকার করে।

ফেসবুক পেজে একটি দৈনিক পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে দাড়ি কাঁটা ও পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তের শিক্ষক নিয়োগের পর ছাত্রীদের বোরকা পরে ক্লাস না করার নির্দেশ দিয়েছিল বিভাগীয় সভাপতি ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম। এই মুরতাদ আজ তার যথাযথ প্রতিদান পেয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

ফেসবুক পেজে নিহত ব্লগার রাজীব ও আশরাফুল ইসলামের পর শফিউলের লাল ক্রস চিহ্ন যুক্ত ছবি পোস্ট করা হয়েছে।

ক্লাসে মেয়েদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ ও দাঁড়ি-টুপিধারী ব্যক্তিদের বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে না এমন মন্তব্যকে ইসলামবিরোধী বলে দাবি করা হয় ওই পেজে। আর এ কাজের জন্য মৃত্যুই তার উপযুক্ত শাস্তি বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি। ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও গাড়ি ভাংচুর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ড. শফিকুল হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করে খুনিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন বলে তার প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।

RUপ্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক শফিউল ইসলাম শনিবার মোটরসাইকেলে তার বিহাসের বাসায় ফিরছিলেন। তিনি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের একটু ভেতরে নিজ বাসভবনের সামনের নির্জন স্থানে পেঁৗছলে ৮-১০ দুর্বৃত্ত তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলায় তিনি মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এর পরও দুর্বৃত্তরা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধ্যাপক শফিউল ব্যক্তিগত জীবনে তিনটি বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে তার প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীকে তিনি তালাক দিয়েছেন। তার একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

শফিউল ইসলামের জানাজা গত রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় আজ তাকে দাফন করা হবে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here