এনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান প্রতিনিধি :: বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলায় শীলকখালের ওপর নির্মিত রাবার ড্যাম প্রকল্পের পেছনে সরকারের প্রায় ৮কোটি টাকা ভেস্তে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্বাবধানে নির্মিত শীলকখাল রাবার ড্যামটি কৃষকদের কোন কাজেই আসছে না।

বিপুল অর্থব্যয়ে এ রাবার ড্যামের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ৩বছর পরেও এটি চালু করা যাচ্ছে না নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির আশ্রয়গ্রহণ ও কাজে চরমক্রটি থাকায়। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ রাবার ড্যাম পানিসেচ কাজে সচালু করা নিয়ে। এটি কার্যত পতিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানী কৃষকরা।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের শীলকখালের ওপর একটি রাবার ড্যাম নির্মিত হয় ৩বছর আগে। প্রায় ৮কোটি টাকা ব্যয়ে এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করে জেলা এলজিইিডর তত্বাবধানে বান্দরবান সদর উপজেলা এলজিইডি। কথা ছিল রাবার ড্যামটি নির্মিত হলে এটির আওতায় এলাকার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি শুস্কমৌসুমে পানিসেচ সুবিধা পাবে।

পাশাপাশি মৎস্যচাষ ও হাঁস-মুগরি পালন প্রকল্পও গ্রহণ করা যাবে। সেই সাথে পর্যটকরাও এ রাবারড্যাম এলাকা ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। কিন্ত এসবের কোনটাই হয়ে উঠেনি এখনও। গত ২০১০-১১ অর্থসালে এ রাবার ড্যামের পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। ১১ফুট উচ্চতায় রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানির সি’তি বজায় রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নির্মাণ কাজে সীমাহীন দুর্নীতি ও অদক্ষ প্রকৌশলীদের অপরিকল্পিত নির্মাণকাঠামো ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পুরো রাবারড্যাম প্রকল্প এলাকা অতিঝূঁকিপুর্ণ হয়ে উঠে।

মূল রাবার ড্যামের দুইপাশে মাটি ও কংক্রিটের বসানো বেশিরভাগ ব্লকই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। ড্যামের তলদেশে ক্রটিপুর্ন কাজের কারণে খালে প্র্রবাহমান পানিরস্তর বা স্থিতি বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। রাবার ড্যাম ফোলানের পর কাংখিত পানির সি’তি না থাকার আশংকায় এ রাবার ড্যাম চালু করার কোন উদ্যাগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

ড্যাম এলাকায় ৪টি স্পীডবোট খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। পাম্পহাউস ভবনটিও কার্যত পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। এভবনে শীলকখাল রাবার ড্যাম পাবসস লি.নামে একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো ছাড়া কোন কাজ চলনাম নেই বলে জানান এলাকার আদিবাসী কৃষক মনুচিং মারমা ও চাইকিউ প্রু মারমা।

কিবুকপাড়ার বাসিন্দারা বলেন, এখানকার কৃষকরা আশায় বুকবেধে ছিলেন- এ রাবার ড্যামটি চালু হলে প্রতিবছরই শুস্কমৌসুমে অনাবাদি বহু জমিই সেচসুবিধা পাবে,কিন’ সেই স্বপ্ন এখনও পুরন হয়নি, দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

শীলকখাল রাবার ড্যাম এলাকা পরিদর্শনকালে জানা গেছে,এ রাবার ড্যাম নির্মাণের সময় স্থানীয় আদিবাসী পরিবারগুলোর শতবছরের ভোগদখলীয় ও বন্দোবস্তিকৃত প্রায় ৬একর সমতল ভ’মি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জবরদখল করে নেয়। ওই সময় এলজিইডির প্রকৌশলীরা ভুমির ক্ষতিপুরন দেয়ার কথা বললেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনও পায়নি ভুমির ক্ষতিপুরণের কোন অর্থ বা সহায়তা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সহজ-সরল আদিবাসীদের মিথ্যা ও প্রলোভন দেখিয়ে ধোকাবাজি করেছে। এসব পরিবার তাদেরই শতবছরের ভোগকরা ৬একর জমি হারিয়েছে রাবার ড্যামের কারণে। অন্যদিকে কথিত ৩০০ হেক্টর জমির সেচসুবিধা নিশ্চিতের দোহাই দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে সরকারি কোষাগারের প্রায় ৮কোটি টাকা।

এলাকার জনপ্রতিনিধি ও পাহাড়ি নেতারা বলছেন, এ বিশাল অংকের অর্থ সহায়তা দিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার কৃষকের মাঝে বিনাপয়সায় প্রয়োজনীয় সেচকাজের যন্ত্রপাতি বিতরণ করা সম্ভব হত। এতে ফিবছরই কমপক্ষে ৫০কোটি টাকা মুল্যের অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপন্ন করা যেত।

রাবার ড্যামের ব্যাপারে এলজিইডি‘র প্রকৌশলীরা দাবি করেন,এ রাবার ড্যাম পরিচালনায় স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠিত হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই এটি পরীক্ষামুলক চালু করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here