রফিকুল ইসলাম ফুলাল, দিনাজপুর প্রতিনিধি :: করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে রাত ৪টায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে বিস্মিত করেছেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাত ৪টায় দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬টি দল শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ পরিবারকে রাত ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কাজ করেন।

গভীর রাতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার কারণ হলো, যাতে করে ত্রাণ দিতে গিয়ে জনসমাগন না হয়। মানুষ যাতে একজনের সাথে আরেজনের কাছাকাছি আসতে না পারে। এমনটাই জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা।

করোনায় কর্মহীন ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা জেলা প্রশাসক বরাবর খাদ্য সামগ্রীর জন্য আবেদন করলে সেগুলো যাচাইবাছাই করে এসব ত্রাণ সামগ্রী কর্মহীন সাধারণ মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম। ১০ দিনের জন্য একটি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, আলু সরবরাহ করা হয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান লোকদেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক।

রাত ৪টায় দিনাজপুর শহরের বড় বন্দর এলাকার মো. মোতাহার হোসেনের বাড়িতে জেলা প্রশাসক নিজেই দরজার সামনে থেকে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলে তিনি কেঁদে ফেলেন। কান্না জড়িত অবস্থায় মোতাহার হোসেন বলেন, ‘এই অভাগাদের জন্য স্যার নিজেই এসেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই বাসায় চাল নেই। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। স্যারের দেওয়া খাদ্য সামগ্রী দিয়ে কিছুদিন পরিবারের সবাই খেয়ে বাঁচতে পারব।’

শহরের ক্ষেত্রিপাড়া এলাকার মো. মোখলেস উদ্দিন বলেন, ‘এত রাতে ডিসি স্যারের মত লোক নিজেই এসে দরজায় ডাক দিবেন কখনোই কল্পনা করতে পারিনি। তিনি নিজের হাতে আমাকে চাল, ডাল, তেল, আলুর বস্তা তুলে দিয়েছেন। স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়ার মত ভাষা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আমি ভালো আছি এই চিন্তা করার সময় এখন নয়। আমার চারপাশের লোকজন কতটা ভালো আছেন সেটা দেখার সময় এখন। জেলা শহরের ৫০০ হতদরিদ্র, কর্মহীন পরিবারকে আমরা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। রাতে ত্রাণ দেওয়ার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। এই কাজটি আমি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে। তারাও প্রতিনিয়তই দিনরাত খেটে যাচ্ছেন। আমরা চাই দেশের মানুষ ভালো থাকুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের কথা ভেবেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের পাশাপাশি সমাজের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। সবাই সবার জায়গা থেকে যতটুকু পারেন অন্যকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহবানও জানান তিনি।’

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here