ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বার ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২০২৪ কার্যকরী কমিটির নির্বাচন। শুরু থেকে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও অবশেষে অংশ নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেল নীল দল। অন্যদিকে, তারিখ ঘোষণার পর থেকে সরব আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা। শেষ সময়ে চূড়ান্ত বিজয়ে আশাবাদী দুই দলই।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে নানা অভিযোগ তুলেছিলেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেল নীল দলের আইনজীবীরা। বিগত দুইটি নির্বাচনে কারচুপি, অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা।
এছাড়া আসন্ন নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আবুর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এসবের পরও প্যানেলসহ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে নীল দল ।

নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আন্দোলনের কৌশল হিসেবে দাবি করছেন তারা। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারণায় কমতি রাখেননি। মাসখানেক আগে থেকে জোরেশোরেই প্রচারণা চালিয়েছেন তারা। তবে জয়ের ব্যাপারে দুই দলই আত্মবিশ্বাসী।

আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. মিজানুর রহমান মামুন বলেন, সাদা দল বিজয়ী হলে সাধারণ আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ হয়। সমিতির উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সাদা প্যানেলের বিজয় জরুরি। আমরা নির্বাচনে এটাই প্রচার করেছি, বিজয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। বিজয়ী হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের কৌশল হিসেবে নীল দল ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের অংশ নিচ্ছে। অতীতের মতো যদি কোনো কারচুপি না হয় এবং নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু ভোট উপহার দিতে পারে তাহলে নীল দল প্যানেলসহ বিজয়ী হবে। আমরা বিজয়ী হলে আইনজীবীদের সুরক্ষা আইনসহ সাধারণ আইনজীবীদের কল্যাণে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

এর আগে গত ২০২২-২০২৩ কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭টি পদ এবং বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল লাইব্রেরি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকসহ ৬টি পদে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন।

২০২৩-২০২৪ কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ আবুর পদত্যাগ দাবি করে নীল প্যানেলের আইনজীবীরা। এছাড়া তার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন। তবে যুগপৎ আন্দোলনের কৌশলের অংশ হিসেবে তারা প্যানেলসহ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী সাদা দলের আইনজীবীদের প্যানেল ঘোষণার আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেন। প্যানেল ঘোষণার পর আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীরা জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন।

বিএনপি সমর্থিত সাদা প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ নজরুল বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের দাবির মুখে নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং সাধারণ আইনজীবীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে প্যানেলসহ নীল দলই জিতবে।

আওয়ামী সমর্থিত সাদা প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের বলেন, সাদা দল নির্বাচিত হলে সাধারণ আইনজীবীদের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। আইনজীবীদের পেশাগত সমস্যা নিরসনে আমরা কাজ করব। জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।

বিএনপিপন্থী নীল প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন, সভাপতি পদে খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি পদে আব্দুর রাজ্জাক , সহসভাপতি মো. সহিদুজ্জামান , ট্রেজারার আব্দুর রশীদ মোল্লা , সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে জহিরুল হাসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ মো. মইনুল হোসেন , নার্গিস পারভীন মুক্তি লাইব্রেরি সম্পাদক, নূরজাহান বেগম সাংস্কৃতিক সম্পাদক, আনোয়ারুল ইসলাম দপ্তর সম্পাদক, মোবারক হোসেন ক্রীড়া সম্পাদক ও মাহবুব হাসান রানা সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

এছাড়া সদস্য পদে আলী মর্তুজা, আনোয়ার হোসেন, মাহফুজুর রহমান ইলিয়াছ, সহেল উদ্দিন রানা, ইয়াকুব আলী, মোহাম্মদ আরিফ, আলী বাবু, মুক্তা বেগম, মোজ্জাম্মেল হক, রেজাউল হক রিয়াজ ও রুবিনা আক্তার রুবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী নীল প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন, সভাপতি পদে মিজানুর রহমান মামুন, সাধারণ সম্পাদক পদে খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, সিনিয়র সহসভাপতি পদে রুমানা জামান রীতু , সহসভাপতি পদে প্রাণ নাথ, ট্রেজারার পদে বিবি ফাতেমা মুন্নী, ফাহিম শরীফ সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক, মো. মাহবুব হোসেন জয় সহ-সাধারণ সম্পাদক, মো. রেজাউল হক রিপন লাইব্রেরি সম্পাদক, শিখা ইসলাম সাংস্কৃতিক সম্পাদক, মো. গোলাম কিবরিয়া সুমন দপ্তর সম্পাদক, এস এম মিজানুর রহমান ক্রীড়া সম্পাদক ও মো. আবুল হাসনাত জিহাদ সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া সদস্য পদে মো. কামাল হোসেন, গাজী ইমরুল, আসলাম হোসেন, ইয়াসিন জাহান ভূঁইয়া (নিশান), মো. তানজির হোসেন রবিন, অ্যাডভোকেট শারমিন সুলতানা টুম্পা, ইসমত আরা শারমিন (রীমু), মো. আশিকুল ইসলাম মুরাদ, সঞ্জয় কুমার কর্মকার, জহির উদ্দিন জহির এবং নাছির উদ্দীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির মোট সদস্য ২৭ হাজার ৯২৪ জন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৬১৮ জন সদস্য তাদের ভোট দিতে পারবেন। বিগত নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উপহার দিয়েছি। এবারও প্রার্থী ও ভোটারদের সহযোগিতা নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here