ডেস্ক নিউজ :: ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রথম সারির সদস্য থেকে বুধবার সরে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারকে হতভম্ব করে দিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই বেদনাদায়ক ঘোষণায় দম্পতি বলছেন, তারা উত্তর আমেরিকায় বসবাস করবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘ-প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কচ্ছেদও ঘটাবেন।

গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, রাজপরিবারের কর্ণধার রানি কিংবা বাবা প্রিন্স চার্লসকে না জানিয়েই তারা এই আকস্মিক ঘোষণা দিয়েছেন।

গত একটি বছর ছিল এই দম্পতির জন্য উত্তাল সময়। তারা এবার প্রকাশ্য বলছেন, রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে তাদের গণমাধ্যমের নজরে থাকতে হচ্ছে। এতে তাদের ব্যক্তিগত জীবন অসুবিধায় পড়ছে। প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাদের নিয়ে প্রকাশিত নেতিবাচক খবরের প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন বাজেভাবে।

বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ থেকে আমরা সরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করছি। অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাধীন হতেই কাজ করব। এ সময় রানির প্রতি অব্যাহত সমর্থন রাখার কথাও জানিয়েছেন তারা।

তারা বলেন, চলতি বছরকে আমরা একটি ক্রান্তিকাল হিসেবে বেছে নিয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানের ভেতর একটি প্রগতিশীল নতুন ভূমিকা পালনের কাজ শুরু করে দিয়েছি। কাজেই উত্তর আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে আমাদের সময়ের একটি ভারসাম্য নির্ধারণের পরিকল্পনা করেছি।

তাদের এ ঘোষণায় রাজপরিবার বিস্মিত হয়েছে।

সন্তান আর্চির বেড়ে ওঠার পাশাপাশি নতুন একটি দাতব্য সংস্থা খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘এই ভৌগোলিক ভারসাম্য’ সহায়ক হবে বলে যুক্তি দিয়েছেন তারা।

বিবিসির রয়্যাল করেসপনডেন্ট জনি ডায়মন্ড লিখেছেন– হ্যারি-মেগানের ওই ঘোষণা বাকিংহাম প্রসাদকে বেশ বড় ধাক্কাই দিয়েছে। রাজপরিবার তাদের সিদ্ধান্তের কারণে যতটা না আহত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আহত হয়েছে তারা যেভাবে আলোচনা না করে ওই ঘোষণা দিয়েছেন- তা নিয়ে।

বাকিংহাম প্রাসাদের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, হ্যারি-মেগান যে আলাদা জীবন চাইছেন, সেটি তারা বুঝতে পারছেন। তবে এখানে জটিল অনেক বিষয় আছে, আর তার সমাধান করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

বড়দিনের সময় রাজকীয় দায়িত্ব থেকে ছয় সপ্তাহের ছুটি নিয়ে সাত মাসের ছেলে আর্চিকে নিয়ে কানাডায় বেড়াতে গিয়েছিলেন ৩৮ বছর বয়সী মেগান ও ৩৫ বছর বয়সী হ্যারি। সেখান থেকে ফিরে মঙ্গলবার তারা লন্ডনে কানাডার হাইকমিশনে গিয়েছিলেন উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অভিনেত্রী মেগান তার কাজের সূত্রে এক সময় টরন্টোতে কাটিয়েছেন। সেখানে তার বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবও আছেন। আর রাজপরিবারের জীবনে অনেক কিছুর সঙ্গেই তারা মানিয়ে নিতে পারছেন না।

অনেক মানুষের মধ্যে এলে হ্যারি ও মেগান- দুজনকেই দারুণ প্রাণবন্ত দেখায়। কিন্তু মিডিয়ার ক্যামেরা আর রাজপরিবারের গুরুগম্ভীর আচার-অনুষ্ঠানগুলো হ্যারির দারুণ অপছন্দ।

মেগান এর আগে পুরোদস্তুর পেশাজীবীর জীবন কাটিয়ে এলেও প্রাসাদের জীবনে প্রতিদিনের ক্লান্তিকর রুটিন মানতে গিয়ে তাকেও মেজাজ হারাতে দেখা গেছে।

তিনি বলেছেন, তিনি বোবা পুতুলটি হয়ে থাকতে চান না, কিন্তু যখনই উচ্চকণ্ঠ হয়েছেন, তাকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে।

বিবিসি লিখেছে– এই জুটিকে তাদের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেও নতুন অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এর পর কোন ভূমিকায় দেখা যাবে তাদের? রাজপরিবার ছেড়ে তারা কোথায় থাকবেন? টাকা আসবে কোত্থেকে? রাজপরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এখন কেমন থাকবে?

এবং এর সঙ্গে আরেকটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রশ্নও উঠে আসছে। হ্যারি-মেগানের সিদ্ধান্ত রাজপরিবারের জন্য কী বার্তা দিচ্ছে?

অবশ্য তারাই প্রথম নন, হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানাও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিচ্ছেদের আগে ১৯৯৩ সালে রাজকীয় দায়িত্ব কমিয়ে নিজের মতো জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তার আগে ১৯৩৬ সালে রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তো মার্কিন নারী ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য সিংহাসনই ত্যাগ করেছিলেন।

এ ছাড়া হ্যারির চাচা প্রিন্স অ্যান্ড্রু গত বছর শেষ দিকে এপস্টেইন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আর অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী সারাও তাদের বিচ্ছেদের পর রাজকীয় দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here