আলমগীর মানিক, রাঙামাটি

বরকল হতে অপহৃত পাচঁ বাঙালি জেলে উদ্ধার ও ডিসি অফিস ভাংচুর ঘটনায় আটক ১৬ গ্রামবাসীর মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে পাচঁ বাঙালি সংগঠনের ডাকা সকাল-সন্ধা হরতাল শানি-পূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে বরকল উপজেলার ২ নং সুবলং ইউপির ইসলামপুরের কাপ্তাই হৃদে অপহৃত একজন রমজান আলীর লাশ পাওয়া গেছে। সে বরকল উপজেলার ভুষনছড়ার ভান্ডারি পাড়ার আজরত আলীর ছেলে। স’ানীয় কয়েকজন নিহতের লাশ দেখে পরিচয় সনাক্ত করে। পুলিশ দুপুরে লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় পুরো রাঙামাটি জুড়ে জনসাধারনের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।

হরতাল চলাকালে সকাল থেকে দোকানপাঠ ও স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল। সড়ক ও নৌপথে কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করেনি। এসময় কোন গাড়ি চলাচল না করায় স’বির হয়ে পড়েছে পুরো শহর। পাহাড়ী এই শহরের একমাত্র বাহন অটোরিক্সা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় কর্মজীবি মানুষকে পায়ে হেটেঁ গন-ব্যস’লে যেতে হয়েছে। শহর থেকে দূরপাল্ল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন স’ানে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকরা। রাঙামাটি শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় স্বতস্পূর্ত হরতাল পালনের খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আগামী ৮ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনের কারনে বাঘাইছড়ি উপজেলা হরতালের আওতামুক্ত ছিল।
যানবাহন না চলায় জন সাধারণের দূর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। হরতালের কারণে গতকাল রাঙামাটিতে পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়াও আগের দিন রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা শহরে আটকে পড়েন।

হরতাল শেষে সমঅধিকার আন্দোলনের নেতা পেয়ার আহম্মেদ খান হরতাল সফল হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন প্রশাসন হরতাল বাঞ্চাল করতে নানামুখি অপচেষ্টা চালিয়েছে। হরতালের আগের দিন বুধবার সন্ধায় হরতালের সমর্থনে রাঙামাটি শহরে মিছিলে পুলিশ বাধাঁ দেয়। লংগদু উপজেলায় সমঅধিকার নেতা খলিলুর রহমান খানকে থানায় ডেকে নিয়ে বৃহস্পতিবারের হরতাল পালন থেকে বিরত থাকার জন্য পুলিশ তিনঘন্টা থানায় আটকে রাখে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে বরকলের সুবলং থেকে উদ্ধারকৃত লাশ বিকেলে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ময়না তদনে-র জন্য আনা হয়েছে। বরকল থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার এসআই ইদ্রিস জানায় আমরা লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরন করবো, ময়নাতদনে-র পর বিস-ারিত বলা যাবে।

গত ৪ ডিসেম্বর রাতে বরকলের বড় হরিণা নদী থেকে একদল অস্ত্রধারী উপজেলার ভুষনছড়ার বাসিন্দা পাঁচ বাঙালি জেলে মোখলেস, জাহিদ ,আজহার, রমজান ও ইউছুফকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ।
গত ১ মাসেও তাদের কোন হদিস না পাওয়ার প্রতিবাদে এই হরতাল পালন করে স’ানীয় বাঙালিদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, সমঅধিকার ছাত্র আন্দোলন, বরকল উপজেলা বাঙালি জনকল্যাণ সমিতি এবং পার্বত্য বাঙালি ঐক্য পরিষদ।

অপহৃত জেলেদের উদ্ধারের দাবীতে গত ১ জানুয়ারী রাঙামাটি শহরে বাঙ্গালীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে উত্তেজিত জনতা ডিসি অফিস ভাংচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ বরকলের ১৬জনকে আটক করে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। আটক ১৬জনের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে পুলিশি নির্যাতনের।

নিখোঁজদের পরিবারের দাবী উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরন করে নিয়ে গেছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর জেলা পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা বরকল সফর করে স’ানীয়দের বার বার আশ্বাস দেন। ঘটনার পরদিন বিএসএফের সাথে বরকল বিজিবি পতাকা বৈঠক করে। বৈঠকে বিএসএফ নিখোঁজদের উদ্ধারে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও অপহৃতদের ব্যাপারে তারা এ পর্যন- কোন তথ্য দিতে পারেনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here