.
মোঃ শাহীন :: নিশ্চয়ই আমরা বইতে পড়েছি ‌’পুকুর চুরি’।কিন্তু মানব জীবনে এই বাগধারাটি গুরুত্ব কি কখনোও ভেবে দেখেছি?  সত্যিই কখনও ঐরকম ভাবা হয়নি।কিন্তু মানব জীবন এটি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত।
.
নিশ্চয়ই আপনারা রবীন্দ্রনাথের এই কথা গুলো পড়েছেন ‘বাংলা জননী আমাদের বাঙালি করে রেখেছো,  মানুষ করোনি।’  তিনি হয়তো বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই অনুধাবন করেছিলেন। আমরা এমন এক জাতি যাদের নীতি নৈতিকতার চরম অধঃপতন ঘটেছে। আমরা ভুলেই গেছি আমরা যে মানুষ। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কি? আমরা রক্ষকেরাই আজ ভক্ষকে পরিনত হয়েছি। নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে গরীব ও অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া সামান্য কিছু চাল চুরি করতেও দ্বিধাবোধ করি না। কতোটা নৈতিক অধঃপতন হয়েছে আমাদের।
.
কেউ এমনটা ভাবছেন না তো যে চাল চুরি আর এমন কি বড় বিষয়?  আপনাকেই বলছি কখনও দেখেছেন?  আপনার আশে পাশে অনেক অসহায় মানুষ আছে যারা অনাহারে দিন কাঁটায়। এদের জন্য কি আমাদের একটুও মায়া হয় না?  এরা কি মানুষ নয়? এদের কি ক্ষুধা নেই?  হ্যা, এরাও আমাদের মতো রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। এদেরও রয়েছে অধিকার। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,  শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। কিন্তু বাস্তবে কি তারা সেটা পাচ্ছে?
.
কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন যারা এই অসহায় মানুষ গুলোর মৌলিক অধিকার হরণ করছে। মানবাধিকার সনদে মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশের সরকার সব সময় মানুষের এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। কিন্তু কিছু সংখ্যক মানুষ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সবচেয়ে বড় বাঁধা।
.
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়তো এই জন্যই বলেছিলেন ‘আমি চোরের দেশে বাস করি।’ কারণ যুদ্ধের পরেই আমরা প্রমাণ করছি জাতি হিসেবে আমরা চৌয্যবৃত্তিকে কতোটা লালিত করছি। তা না হলে, মানুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যক কম্বল বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ নিজের ভাগের কম্বলটাই পেলেন না তিনি !
.
এবার বর্তমান বিষয়ে বলতে চাই, আমরা আজ এক সংকটময় পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আছি?  এর মূলে রয়েছে করোনা ভাইরাস। এই অস্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের কাজ কর্ম বন্ধ, আয় রোজগার নেই। তাই এসব অসহায় মানুষের জন্য সরকার চাল ও অন্যান্য সামগ্রী বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেন। এতে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে- এটা বন্টনের দায়িত্বে যারা থাকেন। তাঁরাই রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য কি খুবই লজ্জাজনক বিষয় নয়?
.
বাঙালি জাতি হিসেবে তো আমাদের অনেক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। যেমন- ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান ও সব শেষ ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধ। তখন তো আমরা এমন ছিলাম না! তাহলে পরবর্তীতে কি হলো আমাদের?  কেন এমন নৈতিক অধঃপতন?  এর উত্তর কি আছে আমাদের কাছে?
.
একটি পরিসংখ্যান থেকে বুঝতে পারবো আমাদের অবস্থা। গত দুই সপ্তাহে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দের ২ হাজার ১৭৪ বস্তা চুরি হওয়া চাল উদ্ধার করেছে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী। তবে এখনও হদিস মেলেনি ৫৫০ বস্তা চালের। সবচেয়ে বেশি ৬৯৫ বস্তা চুরি হওয়া চাল উদ্ধার হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে এবং সবচেয়ে কম ৩৮ বস্তা উদ্ধার হয়েছে সিলেট বিভাগ থেকে। এসব ঘটনায় সারা দেশ থেকে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
.
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে ত্রাণ নিবে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। রাস্তায় সারি সারি ত্রাণ জমা হয়েছে আছে। সেখানে আমাদের অবস্থা কতটা শোচনীয় ভাবতে অবাক লাগে।
.
“Honesty is the best Policy ”.  হয়তো এই নীতি বাক্যটি আমরা ভুলেই গেছি। বইয়ে পড়েছিলাম। বইতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এই শিক্ষা আমাদের বাস্তব জীবনে কোন কাজে লাগেনি। সততা আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে গেছে।
.
হবে কি আমাদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত?  ফিরতে পারবো কি নৈতিক অধঃপতন থেকে?  আমাদের যাদের খাবারের অভাব নেই  তারা কেন গরীবের খাবার কেড়ে  নিব? এর  জন্য কি স্রষ্টার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে না আমাদের?  জানি না এসব প্রশ্নের উত্তর পাব কিনা।
.
.
.
.
মোঃ শাহীন

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি। enaethhossindu2015@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here