খাদিজা ইসলাম::  “মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য” গানের এই অমীয় বাক্যটি স্বেচ্ছায় যারা রক্ত দান করে তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । পরিবারের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সকাল-সন্ধ্যা রাতের তোয়াক্কা না করে ছুটে চলে মৃতপ্রায় আত্নাকে বাঁচাতে। তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে চাই কেবল একটুখানি সম্মান । কিন্তু তাও যেনো দিতে চাই না অনেকে। কেউ হয়েছেন বর্নবাদের শিকার কেউবা জাতের। আবার কেউ কেউ হয়েছেন কটাঙ্খের শিকার। রক্ত যোদ্ধাদের এইসকল নানা ঘটনা তুলে ধরছেন রিপোর্টার খাদিজা ইসলাম।

আফরোজা আক্তার তন্বী , শিক্ষার্থী

তিনি বলেন, ‘রক্ত দান করে মনে একপ্রকার শান্তি পাই যা কোনো কিছুর বিনিময়ে সম্ভব না। তিক্ত অভিজ্ঞতার-ও শেষ নেই। কত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে রক্ত দান করেছি। রক্ত দান করতে গিয়েও যখন বর্ণবাদীতা দেখা যায়। ডেলিভারি অবস্থায় একজন মায়ের যখন রক্তের প্রয়োজন পরে,তখন হন্যে হয়ে ডোনার খুঁজে দেই। তারপর সেই ডোনার রক্ত দিতে পারেনা। সে কালো অথবা ভিন্ন ধর্মী বলে ফিরিয়ে দেয় এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে? অনেক স্বেচ্ছাসেবীরা নিজের টাকায় যাতায়াত করে রক্ত দেয়,প্রতিদান হিসেবে আশা করে আন্তরিকতা। তাও মেলেনা রোগীর পরিবার থেকে। শতকরা দু একজন ছাড়া কেউ খোজঁ নেয়না রক্ত দেওয়ার পর ডোনার কেমন আছে! এসব কারণে স্বেচ্ছাসেবীরা রক্তদানে নিরুৎসাহিত হয়।সমাধানের জন্য সবার মধ্যে রক্তদানের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে হবে। একজন ডোনারকে যথোপযুক্ত সম্মান দেওয়া আবশ্যক । তাহলে ভবিষ্যতে আর-ও স্বেচ্ছাসেবী তৈরি হবে।’

জহিরুল ইসলাম, শিক্ষার্থী

তিনি বলেন , স্বেচ্ছায় রক্তদানে বর্তমান তরুণ সমাজের অবদান-ই বেশি চোখে পড়ার মতো।আমি ১৭ বার স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেছি।নিজেকে এমন মহৎ কাজে সম্পৃক্ত করতে পেরে ভাগ্যবান মনে হয়।’

” নিজ রক্ত যদি না বহে অন্যের শিরায় তা হলে কিভাবে দিবো মানবতার পরিচয় ।” তবে,রক্তদান করতে গিয়ে যেসব পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তা বলার মতো না। যে সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হতে হয় তা হলো –

১.রক্তদাতা রক্ত দিবে এটাই স্বাভাবিক তবে মানবিকতার খাতিরে যাতায়াত ভাড়া দিবে তাও দিতে চায় না কিছু রোগীর আত্মীয়স্বজন।

২.রক্তদানের পর পরই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ডোনার বাসায় পৌঁছেছে কিনা তা তাদের আমলে নেই।

৪.রোগীর আত্মীয়রা মনে করে স্বেচ্চাসেবীরা সংগঠন থেকে রক্তদানের জন্য টাকা পায়।

৫.রক্তদান শেষে কৃতজ্ঞতার লেশমাত্র-ও দেখা যায় না

৬.অনেক সময় তাদের সাথে বাজে ব্যবহার-ও করতে দেখা যায়।

ডোনারদের যথোপযুক্ত সম্মান আর তাদের প্রতি সহনশীল হলে ভবিষ্যতে আরো রক্ত যোদ্ধা তৈরি হবে।

রোমা আক্তার, শিক্ষার্থী

সতিনি বলেন , ‘যত বাঁধা প্রতিকূলতা আসুক না কেন কখনোই স্বেচ্ছায় রক্ত দান হতে পিছপা হবো না। রক্ত দান না করলে রক্তদানের অনুভূতি বুঝতে পারতাম না। সকলের একবার হলেও রক্তদান করা উচিত বলে আমি মনে করি। মানবতার এই মহৎ কাজটি ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে । কিছু জায়গায় সমস্যা থাকবেই , তবে সব সমস্যাকে টপকে রক্তদাতারা এগিয়ে যাবে।’

কোরবান আলী , শিক্ষার্থী

তিনি বলেন , ‘ কিছু মানুষের মন যেন দিনকে দিন যন্ত্রে পরিণত হয়ে গেছে। মায়া মমতা বলতে কিছু নেই। সারা দেশে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক/সেবিকা রয়েছে যারা রাত দিনের তোয়াক্কা না করে রক্ত দান করে। আমি পাঁচপীর ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামক সংগঠন পরিচালনা করি। কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। ব্লাডের প্রয়োজনে হাজার বার ফোন দেয়। অথচ ব্লাড দেওয়ার শেষ হলে ডোনার কে আর মানুষই মনে করেনা। যাতায়াত ভাড়াটাও দিতে চাই না। এমন চলতে থাকলে দিনকে দিন স্বেচ্ছাসেবীদের মন ভেঙে যাবে,হয়তো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে,যখন স্বেচ্ছাসেবক তো দূরের কথা টাকা দিয়ে-ও ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত পাওয়া যেতোনা সঠিক সময়ে। আজ সময় পরিবর্তন হয়েছে রক্তের দরকার হলে এক মিনিটের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্ত পাওয়া যায়। তরুণ প্রজন্মের এ উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়ে, স্বেচ্ছাসেবকদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে যদি সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে আমরা আর-ও উৎসাহ পাবো।দিনকে দিন নতুন ডোনার তৈরি হবে।রক্তের জন্য কোনো রোগী কে মরতে হবে না ইনশাআল্লাহ ।’

তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্পর্কে তিনি বলেন , ‘ তিক্ত অভিজ্ঞতার শেষ নেই। সাদা-কালো বাহিরে, কিন্তু ভেতরে সবার একই রঙের রক্ত। কিন্তু সেখানে এখনো বর্নবাদীতা দেখা যায়। ডেলিভারির সময় যখন হন্যে হয়ে ডোনার খুজে দেই, আর সেই ডোনার হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিতে পারে না সে কালো অথবা ভিন্ন ধর্মের বলে বিবেচিত হলে এর চেয়ে বেশি তিক্ত অভিজ্ঞতা আর হয় না। এরপর এমনও দেখা যায় দূর থেকে অনেকে নিজের খরচে বিনামূল্যে রক্ত দিতে যায়। প্রতিদান হিসেবে শুধু আশা করে একটু আন্তরিকতা আর একটু ভালোবাসা। কিন্তু শতকরা দুই একজন ছাড়া রক্ত দেয়ার পরে ডোনার ঠিক মতো বাসায় পৌছেছে কিনা সেই খবরটাও নেয় না। ‘

পরিশেষে তিনি বলেন , স্বেচ্ছাসেবীদের একটাই লক্ষ্য , ‘আমরা তো স্বেচ্ছাসেবক রোগীদের ব্যবহারে মন ক্ষুন্ন হলে ও পরক্ষনেই রক্তের প্রয়োজন হলে সব কষ্ট ভুলে যাই । আমাদের প্রত্যেকের উচিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিকতা দেখানো।তবেই তৈরি তবে স্বেচ্ছায় নতুন রক্তযোদ্ধা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here