কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ::
যৌতুকের দাবী পূরণ না করায় খুলনার কয়রার স্ত্রী আফরিন আক্তার কে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে উপজেলার স্বামী শরিফুল ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। শুধু তাই নয় গ্রাম্য মাতব্বরদের কাছে বিচার না পেয়ে আদালতে মামলা করায় মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। উল্টো ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান ভোক্তভোগী আফরিন আক্তার ও তার পরিবার। আজ সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কয়রা রিপোটার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ভুক্তভোগী নারী আফরিন সুলতানা এ অভিযোগ করেন ।
সংবাদ সম্মেলনে আফরিন সুলতানা বলেন, ছোট বেলা থেকে আমার ওপর আসক্ত আমার বর্তমান স্বামী শরিফুল ইসলাম আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমি ও আমার স্বামী উপজেলার একই গোবরা গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় সে সহজে ফাঁদ পেতে ধোঁকা দেয়। আমার অন্যত্র বিয়ে হলেও সেখানে ঘর করতে দেয়নি সে। অন্যত্র সংসার করাকালীন আমি একটি বেসরকারি এনজিও’তে চাকরি ও পড়ালেখা চালিয়ে যাই। কিন্তু অর্থ ও যৌতুকলোভী স্বামী শরিফুল ইসলাম আমার চাকরির টাকা হাতিয়ে নিতে আমাকে ওই স্বামীর সংসার থেকে ছিনিয়ে আনে। সে আমাকে ফুসলিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর ১ লক্ষ ১ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে আমার চাকরির টাকায় স্বামী ও তার পরিবারের ভরনপোষণ চলতে থাকে। ইতোমধ্যে এনজিওর প্রকল্পের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে আমার স্বামী। টাকা দিতে না পারায় সে ও তার পরিবার আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এমনকি ৫ লক্ষ টাকা না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী নারী সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, মারপিট সহ্য করতে না পেরে আমি কয়রা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করি। মামলা নং- ৩৭৪/২২। আদালতে কৌশলে আমাকে যৌতুকের দাবিতে মারপিট না করার শর্তে জামিন নেয় স্বামী শরিফুল ইসলাম। এরপরে গত ৯ মার্চ আমি স্বামীর বাড়ি গেলে স্বামী সহ শ্বশুর, শাশুড়ী সকলে আমাকে বেদম মারপিট জখম করে আটকিয়ে রাখে। এসময় আমাকে ফাঁসাতে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ী মিলে তাদের ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করে ফেলে। দোষ আমার ঘাড়ে চাপাতে কয়রা থানা পুলিশকে খবর দেয়। থানা পুলিশ গিয়ে ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ পেলে আমাকে উদ্ধার করে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ দিয়ে আমাকে জেল হাজতে পাঠাতে না পেরে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে স্বামী শরিফুল। পরে গত ৯ এপ্রিল আমাকে সহ আমার পরিবারের ৬জনের নামে কয়রা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মিথ্যা মামলা করে তারা। এতে বিচারের বদলে উল্টো হয়রানি হচ্ছি। এদিকে স্বামী শরিফুল ইসলাম তার বাহিনী আমার ও আমার পরিবারকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, প্রকৃতপক্ষে আমার স্বামী ও তার পরিবার আমার বেতনের টাকা পেয়ে লোভে আমাকে প্রথমে আদরে রাখতো। আমার চাকরি শেষ হলে আমাকে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারপিট শুরু করে এবং এক সময় আমাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমি মামলা করলে মামলায় সাজা নিশ্চিত জেনে এটা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাকে নির্যাতন করে ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে আমার ও আমার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। যার প্রকৃত সত্য গ্রামবাসী জানে এবং আমার কাছে ভ এলাকাবাসী এবং আমার নিকট ভিত্তিও আলামত আছে।
প্রিয় কলম সৈনিক ভাইয়েরা, আপনাদের নিকট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিজ্ঞ বিচারক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট বিনীত আবেদন নারী নির্যাতনকারী, যৌতুক লোভী, মিথ্যা মামলায় হয়রানীকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত স্বামী ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র শরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমার উপর আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট, আমাকে জোর পূর্বক ফাঁসিয়ে আফরিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আমাকে মানহানীসহ ক্ষতি করিবার চেষ্টা করে। আমি ও আমার পরিবার এ বিয়ে মানি না। তাই আদালতের মাধ্যমে তালাক প্রদান করেছি। প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে তার সকল দেনা পাওনা পরিশোধ করিব।