মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি  :: যৌতুকের জন্য স্বামী, শ্বাশুড়ি, চাচা শ্বশুরও দেবরের পুশ করা বিষাক্ত ইঞ্জেকশনে হাতে পচন ধরে হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার মোঃ নুর নবীর মেয়ে আয়শা আক্তার জোনাকি(২২)।

বছর তিনেক আগে নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলার করিমপুর গ্রামে কালামিয়ার পোল সংলগ্ন হানিফ মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন রাজু (২৭) সাথে বিয়ে হয় জোনাকির। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে আসছে স্বামী ও পরিবারের লোকজন।

হত্যার জন্য জোনাকিকে তার পরিবারের সদস্যরা মিলে যৌতুকের জন্য বিষাক্ত ইঞ্জেকশন পুশ করে । বর্তমানে জোনাকির হাতটি পঁচে গিয়ে হারানোর উপক্রম হয়ে পড়েছে। সে এখন ঢাকা সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস’ায় রয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মোজাম্মেল হোসেন রাজুর ২বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। তার জন্মের পর থেকে যৌতুকের জন্য জোনাকির উপর নির্যাতন করে আসছে স্বামী ও পরিবারের লোকজন। এক পর্যায়ে যৌতুকের জন্য স্বামী ও পরিবারের লোকজন তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

কিন্তু জোনাকি একমাত্র সন্তানের সুখের কথা ভেবে পুনরায় স্বামীর বাড়িতে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে বসবাস করতে থাকে। ১৭জুন যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামীর পরোচনায় শাশুড়ি হোসনেয়ারা, চাচা শ্বশুর সবুজ মিয়া এবং দেবর জাবেদ বিষ যুক্ত ইঞ্জেকশান জোড় পূর্বক জোনাকির হাতে পুশ করে হত্যার জন্য। পুশ করার ফলে তার বাম হাতে পচন ধরে।

এ সময় শ্বশুর বাড়ির লোকেরা চিকিৎসা না করিয়ে তাকে তার ননদ শাহনাজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখে পার্শ্ববর্তী গ্রামে। তাকে অনেক  খোঁজাখুজির পর জোনাকির পিতা তার মেয়েকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করায় ২৬জুন।

তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তার পিতা গত ২৪ জুলাই সুধারাম মডেল থানায় নারি ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং- ৩৬।

মামলার প্রেক্ষিতে জোনাকির স্বামী মোজাম্মেল হোসেন রাজুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে। এরপর জোনাকিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে গত ৬আগষ্ট ঢাকা সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড (প্রাঃ) লিঃ হাসপাতালে অপারেশন করে বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুধারাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, বর্তমানে জোনাকির হাতটি পঁচে গিয়ে হারানোর উপক্রম হয়ে পড়েছে।সে এখন ঢাকা সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী মোজাম্মেল হোসেন রাজুকে গ্রেফতার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ করে তাঁদের পাওয়া যায়নি। তই এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্যও জানা যায়নি।

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারেফ হোসেন তরফদার বলেন, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন পুশের অভিযোগ পাওয়ার পরই নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here