গ্রামের গর্ভবতী নারীদেরশিপুফরাজী, ভোলা প্রতিনিধি :: এইহানে গর্ভবতী মহিলারা নিরাপদ থাহে না নদী পেরিয়ে ওপার নিয়ে যাওয়ার আগেই তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এইহানে যদি ভালো ডাক্তার ও চিকিৎসা থাকতো, তাহলে মানুষ মরতো না’ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরী-মুকরীতে হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা ভালো না থাকায় এ সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানালেন সেখানকার বাসিন্দা সোহরাব আলী (৫৫)।তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই এ কারণে ৮/১০ জন মহিলা মারা যায়।

তাদের নৌকা-ট্রলার দিয়ে এপার থেকে ওপার নেওয়া সম্ভব হয়না। পথেই মারা যায়।’আমেনা বেগম (৩০) বলেন, ‘মাত্র ৭ দিন আগেই শাহবাজপুর গ্রামে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে এক মহিলা মারা গেছেন। তার নাম মরজিনা (২৫) । চিকিৎসার অভাবে এ ভাবে আর কত মানুষ মরবো। আমাগো কষ্ট কেউ দেহে না ।’

সাগর উপকূলের সবুজের দ্বীপ কুকরী-মুকরীতে ২০ হাজার লোকের বসবাস।ভোলার মূল ভূখ- থেকে প্রায় দেড় শো কিলোমিটার দক্ষিণে এ জনপদের অস্থান। অবহেলিত এ সব মানুষের জীবনও অনিরাপদ।

কারণ, তারা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। নেই কোনো সাইক্লোন সেল্টার কিংবা মাটির কিল্লা। বেড়ি বাঁধ না থাকায় মৃত্যু ঝুঁকিও বেড়ে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন এ চরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও তা কোনো কাজেই আসছে না চরের মানুষদের। সেখানে নেই কোনো ডাক্তার বা নার্স। একজন মাত্র মাঠকর্মী রয়েছেন। তাও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না তিনি।

জানা যায়, প্রায় ৪শ বছর আগে পলি জমতে জমতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে চর কুকরী-মুকরী জেগে ওঠে। এরপর বিভিন্ন সময় এখানে ঘাঁটি তৈরি করে পর্তুগীজরা দস্যুতা চালাতো। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এখানে মানুষের বসতি গড়ে ওঠে।বর্তমানে বাবুগঞ্জ, নবীনগর, রসুলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিম পাড়া, চর পাতিলা ও শরীফ পাড়া নিয়ে কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন।

স্থানীয়রা জানান, কুকরী-মুকরী ইউনিয়নে হাসপাতাল না থাকায় বেড়ে যাচ্ছে গর্ভকালীন নারী ও শিশু মৃত্যুর হার। অন্যদিকে, বিভিন্ন রোগ-শোকেও এখানকার মানুষ মারা যাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও এ সব মানুষের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি।

কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো ক্লিনিকটি খালি। এক নারী মাঠকর্মী বসে আছেন। উপসহকারী কমিউনিটি অফিসার, আবাসিক মেডিকেল পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও পরিদর্শক রুমে তালা দেওয়া। চরের এ স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রটিতে এ সব পদ শূন্য থাকায় রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় স্বাস্থকেন্দ্রের মাঠকর্মী সোনিয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পর দীর্ঘ ৪ বছর ধরে চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সপ্তাহের ৫ দিনই এটি বন্ধ থাকে। আর ওষুধও নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্যকল্যাণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গত ২০১১-১৬ সালে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন ১৬ জন। এর মধ্যে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা ৫।

তবে বেসরকারি হিসাবে এ মৃত্যুর হার আরও অনেক বেশি হবে বলে স্থানীয়রা জানান। পরিবার কল্যাণ এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে জীবন রক্ষাকারী জরুরি ওষুধ নেই। নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। সামান্য কাটা-ছেড়ারও অস্ত্রোপচারও হয় না এখানে। তাদের যেতে হয় নদী পেরিয়ে চরফ্যাশন কিংবা ভোলা জেলা সদরে। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে এখানকার নারীরা সন্তান প্রসব করেন।

এ ব্যাপারে কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম বলেন, ‘এখানকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি হাসপাতাল ও ভালো চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here