বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: যুক্তরাষ্ট্রের হতাশাগ্রস্থ অবৈধ অভিবাসীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবৈধদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্কে গত সোমবার পরিচয়পত্র বিতরন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন নগর মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও একই ধরনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস। এই কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ৪৪ লাখ অভিবাসীকে পর্যায়ক্রমে এই পরিচয়পত্র দেয়া হবে। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত প্রায় পাঁচ লাখ অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয়পত্র বিতরনের কাজ ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। একই কর্মসূচির আওতায় অর্ধ লক্ষাধিক বাংলাদেশিও পরিচয়পত্র পাবেন। নিউ ইয়র্কে পরিচয়পত্র বিতরনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুইন্স থেকে নির্বাচিত ডেমক্র্যাটদলীয় কংগ্রেস সদস্য গ্রেস মেং, সিটি কাউন্সিলের স্পিকার মেলিসা মার্ক-ভিবেরিটো। নিউ ইয়র্ক শহরের ১৭টি স্থানে পরিচয়পত্রের আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ২৪টি ভাষাসহ বাংলাও পাওয়া যাচ্ছে এই ফরম। পাঁচ বছর মেয়াদি এই পরিচয়পত্র আগামী এক বছরের মধ্যে বিতরণ শেষ করবে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ছাড়াও কানেটিকাটের নিউ হ্যাভেন সিটি, নিউজার্সির এসবুরি পার্ক, লস এঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো সিটি, অকল্যান্ড, রিচমন্ড, মনমাউথ কাউন্টি ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও এ ধরনের পরিচয়পত্র দেয়া হবে সূত্রটি উল্লেখ করেছেন। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাসকারীরা এ পরিচয়পত্র পাবার পর শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি আদায়সহ গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বলেন, কঠোর পরিশ্রমী মানুষদেরও সম্মান দেয়ার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর এ সম্মান পাবার অধিকার তাদের রয়েছে। কারন ওদের কঠোর শ্রমের বিনিময়ে এই শহর গড়ে উঠেছে। তাদের প্রতি সম্মান জানানো প্রতিটি নাগরিকেরই দায়িত্ব। পরিচয়পত্র গ্রহনকারী অভিবাসীরা এটি ব্যবহার করে নিউ ইয়র্কের সরকারি স্কুল, হাসপাতাল, ৩৩টি জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। পপুলার কম্যুনিটি ব্যাংক, আমালগ্যামেটেড ব্যাংকসহ ১০টি ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশও পরিচয়পত্রধারীদের সম্মান জানাবে বলে বলে উল্লেখ করেন মেয়র। নিউ ইয়র্ক শহরে ১৪ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে বাস করছেন এমন প্রমাণপত্র, নিজ দেশের পাসপোর্ট অথবা কন্স্যুলার থেকে পাওয়া পরিচয়পত্র অথবা সামরিক বাহিনীর পরিচয়পত্র এবং জন্ম সনদ দেখিয়ে পরিচয়পত্র নিতে পারবেন। এছাড়া সিটির কোনো এজেন্সি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হেলথ ক্লিনিক থেকে সংগ্রহ করা সনদ দেখিয়েও এই শহরের অধিবাসী হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন পরিচয়পত্র পেতে ইচ্ছুকরা। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ওবামার নতুন অভিবাসন পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সব অবৈধ অভিবাসী বৈধতার সুযোগ পাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ লাখ অবৈধ অভিবাসী বৈধতার সুযোগ পাবে, যাদের সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর তিন লাখ অবৈধ অভিবাসী বৈধতার সুযোগ পাবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য শ্রেণিভুক্তির কারণে। তাঁর এ ঘোষণার ফলে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধভাবে বসবাসের আবেদন করতে পারবে ও কাজ করার সুযোগ পাবে। তবে ভোটাধিকার, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও বীমা করার সুবিধা তাদের দেওয়া হবে না। যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের বৈধতা পাচ্ছে, তারা নাগরিকত্ব পাবেন না এবং মার্কিনিদের মতো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন না। যে মা-বাবা যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছর বসবাস করেছে, তারা বসবাসের বৈধতা ও কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এই মানদণ্ডে পড়ছে ৩৭ লাখ অবৈধ অভিবাসী। একইভাবে আরো কয়েকটি মানদণ্ডের রূপরেখা দিয়েছেন ওবামা। যে অবৈধ অভিবাসীরা শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল, তারা থাকার অনুমতি পাবে। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে, সে ক্ষেত্রেও বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের রেকর্ড যাচাই করা হবে। আগে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে বা কোনো মামলা থাকলে, তারা বৈধভাবে বসবাসের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। কেউ যদি অপরাধী হয় তাহলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের পরিকল্পনা করে, তবে তার গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।