ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে ::
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুসলমানদের জয়জকার। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে মুসলমানদের নির্বাচনে বিজয়ী হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ১৪৫ জন মুসলিম আমেরিকান স্থানীয়, রাজ্য ও ফেডারেল পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের কেউ জয়ী হয়েছেন এবং কেউ ‘প্রথম’ তগমা নিয়ে বিজয়ের হাসি হেসেছেন। ফেডারেল পর্যায়ে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে তিন মুসলিম আমেরিকানই আবার নির্বাচিত হয়েছেন। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
মেহমেত চেঙ্গিস ওজ হতে পারতেন মার্কিন সিনেটে প্রথম মুসলিম। রিপাবলিকান পার্টি তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বড় দল এই প্রথম কোনো মুসলিমকে সিনেটে নির্বাচনের টিকিট দিয়েছিল। কিন্তু পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রাথৃী জন ফেটারম্যানের কাছে হেরে গেছেন। তুর্কি বংশোদ্ভূত সাবেক এই চিকিৎসক হেরে গেলেও সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুসলিমরা বেশ ভালো করেছে। তারা হলেন আন্দ্রে কারসন, ইলহান ওমর ও রাশিদা তালিব।
মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম হিসেবে নির্বাচিত কেইথ এলিসন মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার বর্তমান আসনটি ধরে রেখেছেন।
রাজ্য পর্যায়ে ২৯ জন মুসলিম প্রার্থীর অনেকেই প্রথম মুসলিম হিসেবে রাজ্যের আইনসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। অনেকে তাদের আসন ধরে রেখেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ডেলওয়ার রাজ্যের রিপ্রেজেনটেটিভ মাদিনাহ উইলসন-অ্যান্টন, কলোরাডো রাজ্যে রিপ্রেজেনটেটিভ ইমান যদেহ, কলোরাডো রাজ্য সিনেটর সৌদ আনোয়ার। জর্জিয়ায় এত দিন সিনেটর শেখ রহমান ছিলেন একমাত্র স্টেট সিনেটর। এবার এখান থেকে তার সাথে যোগ দিয়েছেন আরো দুই নারী।
নাবিলা ইসলাম ডিস্ট্রিক্ট ৭ থেকে স্টেট সিনেটর এবং রুয়া রোম্মান ডিস্ট্রিক্ট ৯৭ থেকে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ নির্বাচিত হয়েছেন। রোম্মান ফিলিস্তিনি, তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন জর্ডানে। তিনি জর্জিয়ার কোনো সরকারি পদে প্রথম ফিলিস্তিনি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ভারতীয়-আমেরিকান মুসলিম নাবিলা সৈয়দ ইলিনয়েস থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বর্তমান রিপাবলিকান প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। ২৩ বছর বয়সে তিনি হচ্ছেন ইলিনয়সের জেনারেল অ্যাসেম্বিলিতে সবচেয়ে কম বয়সের সদস্য। তিনি এবং ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আবদেল নাসের রাশিদ হবেন ইলিনয়স স্টেট লেজিসলেচারে প্রথম মুসলিম। টেক্সাসের রাজ্য আইনসভায় প্রথম মুসলিম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সুলেমান লালানি এবং সালমান ভোজানি।
মেইনেও ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে দুজন সোমালি আমেরিকান জয়ী হয়েছেন। মানা আবদির জয়টি ছিল দারুণ ব্যাপার। একসময় তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী বলেছিলেন, কোনো মুসলিমকে সরকারি কোনো পদে রাখা হবে না। অথচ তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রত্যাহার করলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। মিনেসোটায় প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে জয়ী জয়েছেন জয়নাব
মোহাম্মদ। রাজ্যের সিনেটে তিনি একইসাথে প্রথম সোমালি নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী। ওহাইয়োতে আরেক সোমালি আমেরিকান জয়ী হয়েছেন। ২৬ বছর বয়স্কা মুনিরা আবদুল্লাহি হচ্ছেন রাজ্য আইনসভায় প্রথম মুসলিম নারী।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে চার বাংলাদেশি মুসলমান প্রার্থীর নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান ও নাবিলা ইসলাম, কানেকটিকাট স্টেট সিনেটর মো. মাসুদুর রহমান ও নিউ হ্যাম্পশায়ার হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভিস আবুল খান।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ৩৫টি ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের সবকটিতে ভোট হয়। এছাড়াও ৩৬টি স্টেটে গভর্নর পদ ও সবকটি অঙ্গরাজ্যের আইন সভায়ও নির্বাচন হয়।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন বাংলাদেশি আমেরিকান শেখ রহমান। জর্জিয়া স্টেট সিনেটে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন নাবিলা ইসলাম, কানেকটিকাট স্টেট সিনেটে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন মো. মাসুদুর রহমান। তারা সবাই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এদিকে নিউ হ্যাম্পশায়ার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস পদে টানা পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবুল খান। চার বাংলাদেশি আমেরিকানের বিজয়ে আনন্দিত হয়ে উঠছনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here