মৌলবাদীতার চাপে টেলিভিশন থেকে বঞ্চিত বড়াইল গ্রামবাসী!সৈকত দত্ত, শরীয়তপুর প্রতিনিধি :: শরীয়তপুর সদর উপজেলার বড়াইল গ্রামবাসী প্রায় ১৫ বছর পূর্বে বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছে। প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুতের আলো, ফ্যান, ফ্রিজ ও আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম মোবাইল ফোনসহ সকলপ্রকার ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের ব্যবহার রয়েছে। আর ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও গণমাধ্যমের সাথে সরাসরি সম্পর্ক টেলিভিশন ব্যবহার করতে পারছেনা বড়াইল গ্রামবাসী। মৌলবাদী ফতুয়ার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে টেলিভিশন দেখা। এধরনের মৌলবাদী ফোতয়া থেকে বেরিয়ে এসে ডিজিটাল বাংলার সাথে থাকতে চায় শিশু-কিশোর, যুবক-যবতী ও বৃদ্ধসহ সকল শ্রেনী পেশার লোকজন।

বড়াইল গ্রামে প্রাচীন নিদর্শনের সাক্ষ বড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যখন জেলায় হাতেগননা করার মতো কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ঠিক ঐসময়ের একটি বিদ্যালয় বড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে পাশবর্তী গ্রাম স্বর্নঘোষে প্রতি ঘরে স্নাতক/স্নাতকত্তর ডিগ্রী অর্জন করে সরকারী-বেসরকারী চাকরিসহ নানা শ্রেনী পেশায় নিয়োজিত রয়েছে অনেকে। আর সারা বড়াইল গ্রাম ঘুরে স্নাতকত্তর ডিগ্রীধারী দুইএকজন পাওয়া যাবে বলে সন্দেহ রয়েছে।

একধরনের মৌলবাদিতা বড়াইল গ্রামকে ঘিরে রেখেছে। বিভিন্ন সময় নানা মাসলা মাসায়েল ও ফতোয়া দিয়ে বড়াইল গ্রামবাসীদের আধুনিক ও ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে দেখে প্রগৈতিহাসিক যুগের বর্বরতা ফলে শিশু বয়স থেকেই সকলেই জড়িয়ে পড়ে হাঙ্গামায়। কিশোরের হাতে বৃদ্ধ, ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই আহত, লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটে অহরহ। সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলা খাবারের পূর্ব-পর ঝগড়া ফেসাদ না করলে খাবার হজম হয় না তাদের। এ সকলেন নেপথ্যে রয়েছে মৌলবাদীতা। মৌলবাদীতার মূলহোতা আবদুল হাই মুন্সীই পাড়ে বড়াইল গ্রামবাসীদের বর্বরতার যুগ থেকে ফিরিয়ে এনে শান্তিময় জীবন ফিরিয়ে দিতে। এমন দিনের অপেক্ষায় আশায় বাসা বাঁধছে বড়াইলবাসী।

মৌলবাদীতার চাপে টেলিভিশন থেকে বঞ্চিত বড়াইল গ্রামবাসী!সর্বোচ্চ আট বছর বয়সী কয়েক জন কিশোর-কিশোরীর মনির, আসিফ, আন্না, ইভা, সানজিদাদের সাথে আলাপ কালে জানা যায় তাদের চাপা ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। তারা বলে টেলিভিশন না দেখলেই কি সবাই ভালো মানুষ হয়ে যায়? তাহলে বড়াইল গ্রামে ভালো মানুষ কই? মারামারির চিৎকারে ভোরে ঘুম ভাঙ্গে আর হাঙ্গামার ভয়ে রাতে ঘুমাতে যায় তারা। টেলিভিশন দেখা কি খারাপ? তাহলে বড়রা রাস্তার দোকানে বসে টেলিভিশন দেখে ক্যান? টেলিভিশনে ভালো কিছুই দেখায় না? ফতোয়া দিয়া টেলিভেশন দেখা বন্ধ করে মারামারি বন্ধ করতে পারে না?

ইমরান, ইছব বেপারী, সাইফুল মুন্সী, কামরুল মুন্সী,জাকির হাওলাদার, জাহাঙ্গীর বেপারী, আতাউর শেখ, রেহানা বেগম, খায়রুন্নেছা, ফাহিমা বেগমদের বয়স ১৫ বছর থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে ফতোয়া দিয়ে টেলিভিশন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে তার বাড়ির লোকেরাও অন্যত্র গিয়ে টেলিভিশন দেখে।

তাছাড়া টেলিভিশন দেখে ভালো কিছু শেখারও সুযোগ আছে। ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার মিস করা মানে জীবনই মিস। তাছাড়া টেলিভিশন না দেখে কি ভালো হয়েছে? একজনের স্ত্রী অন্য জনে নিয়ে যায়, এক জনে চাই পাতে অন্য জনে মাছ খুলে নেয় তা তো মুন্সী পরিবারেরই ঘটে। তাদের দোষের সাজা সারা বড়াইলবাসী কেন পাবে? সে কি ধরনের রাজ্য কায়েম করতে চায়?

ষাটউর্ধ বয়স্ক মোহাম্মদ তালুকদার, ইব্রাহীম তালুকদার, নুরুলহক মুন্সী সহ অনেকের সাথে আলাপ কালে জানায়, আবদুল হাই মুন্সী তাদের এলাকার সন্তান। বড়াইল গ্রামের প্রতি আবদুল হাই মুন্সীর অনেক অবদান রয়েছে। সে জীবিত থাকতে বড়াইল গ্রামে কেউ টেলিভিশন আনতে পারবে না।

সুধি মহলের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এটা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। বিশ্বের এমন কোন মুসলিম দেশ নাই যেখানে টেলিভিশন নাই। সারা জীবন বই-পুস্তক পড়ে যা শেখা যায় তার চাইতে বেশী কিছু শেখা যায় টেলিভিশনের মাধ্যমে কয়েক মিনিটে। আর যে বড়াইল গ্রামের মানুষদের আধুনিক বিজ্ঞান থেকে দূরে রেখেছে তা খুব শীঘ্রই সমাধান করা উচিৎ। এ ধরনের মৌলবাদিতা জোর করে কারো উপর চাপিয়ে দেয়া উচিৎ না।

বড়াইল নুরানী মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আবদুল হাই মুন্সী তাবলীগ জামাতে গিয়ে মোবাইল বন্ধ রাখায় তার বক্তব্য প্রদান করা গেল না। প্রতিষ্টানের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও অত্র মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা তৈয়াবুর রহমান জানায়, বড়াইল গ্রামে একতা থাকায় সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে গ্রামে টেলিভিশন চললে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা নষ্ট হবে। যুবক-যুবতীরা বেপরোয়া হতেপারে তাই গ্রামে টেলিভিশন চালানো নিষেধ।

শরীয়তপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, পৃথিবীর সর্বশেষ আবিস্কার হলো মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার। টেলিভিশন এর চাইতে অনেক নিচে। টেলিভিশনে ৯০ শতাংশ অনুষ্ঠান দেখা ইসলামের দৃষ্টিতে না যায়েজ কিন্তু ১০শতাংশ তো যায়েজ। তার ঘরে টেলিভিশন রয়েছে কেউ বাঁধা দিলেও সে টেলিভিশন ঘর থেকে বের করবে না। মোবাইল ফোনে সকল ধরনের অশ্লীল সিনেমা রয়েছে আর সেই ফোন যদি পকেটে থাকতে পারে তাহলে টেলিভিশন ঘরে থাকতে পারবে না কেন? পিস্তল তৈরী করা হয়েছে আত্ম রক্ষার জন্য আর সেই পিস্তল দিয়ে যদি কোন মানুষের উপর গুলি করা হয় তা হলে তো সকল পিস্তল ধ্বংস করা যাবে না। পিস্তলের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন রাখতে হবে। অনেকে ফতোয়া দেয় ঘরে টেলিভিশন রাখলে সে মুসলমান থাকে না। আমি এর সাথে একমত না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here