লাল পিরান
–মোহাম্মদ ফারুক আহম্মদ
মা আর চাচীর সে কি প্রচেষ্টা! হাতে সুই সুতোর ফোড় চলছে গজ কাপড়ে একের পর এক।দুদিন বাদে ঈদ। বোনদের জামা বানানোর আয়োজন চলছে ঘরের ঠিক মাঝ খানটায় শীতল পাটি বিছিয়ে। আমার জামার এখন অবধি কোন খবর নেই।
পড়ার টেবিলে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে সিলাই দেখি আর আফসোস মনে মনে। মুখ ফুটে বের হয়না কোন কিছু জাত স্বভাব হয়ত।মন চায় মাঝেমাঝে বলি মা আমার জন্য এবার জামা আনব না! ভেবেই আবার খানিক পড়ায় মনোযোগ। মামুদের বাড়ি গেছিলাম সকাল বেলা । ছোট মামুর নতুন লাল জামাখান দেইখা খুব পছন্দ হইছিল।কাউরে কিছু কইনাই সেদিন।
অই তোর আইডি কার্ড এর নাম্বার দে
~কি করবিরে!
তুই দে
~ কেইস কাবারি করবিনাত!
চুপ।
১৯৭১২৬৯৯২৩৭৫~~~~~~
দুনিয়ার তাবত এইসব নাম্বার কেন জানি আমার মনে থাকে।
ফোন লিস্টের কমপক্ষে একশ নাম্বার মুখস্থ। যাদের ঘুরে ফিরে ফোন করি তাদের বেলায়তো কথাই নেই।
~ সেহরীর সময়েই পিন কোড হাজির। সাথে লিখা এই শোন এইবার ঈদে যত পারিস ফুচকা খাবি আর টো টো করে ঘুরে বেড়াবি।
খুব ব্যস্ততা এই মে জুন মাসের অফিসে । দম ফেলানোর সময় থাকেনা একটার পর একটা কাজ হাজির হয়। হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠল । ধরতেই কিরে আজ এক ঘন্টা সময় হবে!
কি করবিরে!
তুই নিপুন আয়।তোরত হিমু হওয়ার খুব শখ।তোকে হিমু বানিয়ে দিব আজ।
দুনিয়ার তাবৎ হিমুরা সাজে হলুদ আর আমাকে হতে হবে নীল হিমু।কি আর করা বেদনার রং সদা নীল। নীল প্যাকেটখানা নিয়ে অফিস ফেরৎ।
আজব এক কাহিনী জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। কত ছাতা যে এ জীবনে হারিয়েছি ভুলে ভুলে। টং দোকান থেকে টয়লেট কিছুই আর বাদ নেই। ছেলেদের গিফট করতে যেয়ে এক বন্ধু ভুলে একখান ছাতা গিফট করে ফেলেছেন মনের অজান্তে।বন্ধু আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ছাতাখানা হারিয়ে ফেলব মনের অজান্তে!
সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল কলম কাহিনী। এক বন্ধু এক এক করে জোগাড় করেছে পঁচিশখানা কলম। ডিজিটাল যুগে কতই আর লিখা হয়! তবুও সুন্দর কলমে আজন্ম এক দুর্বলতা।অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর কলমগুলোর জন্য!
তাবৎ ঈদ ঈদি আর ভালবাসার ভিড়ে সেই একই আক্ষেপ। সেই যে লাল পিরানখান। আজো চোখে সেঁটে আছে। বলা হয়নি মাকে, মা মামুর লাল পিরানখানের মত একখান লাল পিরান সেই ঈদে আমি যদি পেতাম!