ঢাকা: ধারণা করা হচ্ছে কু-কীর্তিতে খ্যাত কাদের মোল্লার ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাতেই। এখন সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে তার ফাঁসির মঞ্চের দিকে। মানুষ খুন করার মতো জঘণ্য কাজগুলো তিনি করতেন নির্দ্বিধায়। কী কারণে কুখ্যাত এই জামায়াত নেতা তা সবাই জানে। চলুন আমরা আবার একটু দেখে আসি তার কু-কীর্তিগুলো:
কাদের মোল্লার কু-কর্মের তালিকা
১. ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাতজনকে মিরপুর ১২ নম্বরের সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে হত্যা করে কাদের মোল্লাসহ সঙ্গীরা।
২. কাদের মোল্লার নির্দেশে ২৭ মার্চ নারী কবি মেহেরুন্নিসা, তার বৃদ্ধ মা এবং তার দুই ভাইকে জবাই করে হত্যা করে অবাঙালিরা। কবি মেহেরুন্নিসা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কবিতা লিখতেন।
৩. ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মিরপুরের কালাপানির ৫ লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে ঢুকে কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা ও মেঝ মেয়ে আমেনাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হয়রত আলীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করা হয়। ২ বছরের শিশুকে আছাড় দিয়ে মারা হয়।
৪. খন্দকার আবু তালেব ইত্তেফাকে চাকরি করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কবিতা লিখতেন এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিতেন। কাদের মোল্লার নির্দেশে তাকে জল্লাদখানায় নিয়ে হত্যা করা হয়।
৫. শহীদনগরে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে দু’মুক্তিযোদ্ধা ওসমান ও আব্দুল গনিকে হত্যা করা হয়।
৬. ১৯৭১ সালে রাজধানীর পল্লবীর আলোকদি গ্রামে কাদের মোল্লার নির্দেশে ৩৪৪ জনকে হত্যার অভিযোগ।
৭. ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সিরামিক ইন্ড্রাস্ট্রির গেইটে কসাই কাদের মোল্লা তার দলবল নিয়ে একটি মিটিংয়ে আক্রমণ করেছিল। নির্বিচারে মানুষ মেরেছিল কসাইয়ের মতো জবাই করে। ভারী হয়ে উঠেছিল ঐদিন মিরপুরের আকাশ বাতাস।
৮. কুখ্যাত খুনি হিসেবে তিনি তার এলাকা মিরপুরে জল্লাদ ও কসাই নামে পরিচিত ছিল।
৯. এখানে হাজার হাজার বাঙালির হত্যার প্রধান নায়ক ছিলেন জল্লাদ কাদের মোল্লা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিহারীদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের বিপক্ষে নের্তৃত্ব দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) এ, ৩ (২) জি, ৩ (২) এইচ, ৪(১ ও ২) ধারায় ২০১২ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠন করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচার হয় কসাই কাদের মোল্লার। ট্রাইব্যুনাল ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ, খুন ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। এখানে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে।
এরপর এ রায়ে সন্তষ্ট হতে পরেনি দেশের সাধারণ জনগণ। রাস্তায় নেমে আসে তারা। সংসদে পরিবর্তন করা হয় ট্রাইব্যুনাল আইন। ওই আইন অনুযায়ী চলতি বছরের ৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এরপর কাদের মোল্লাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ৫ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশা করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় ৭৯০ পৃষ্ঠার। এতে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। সম্প্রতি এ ফাঁসির আদেশ কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত আসে কারাগার থেকে।